বাংলাদেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার সময় সময়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন টিউশন ফি নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়েছে। এই নীতিমালায় শুধু টিউশন ফি নয়, ২৩টি নতুন ফি ধার্য করা হয়েছে। এই নতুন ফি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি স্কুল-কলেজে কত টাকা ফি আদায় করা যাবে এবং কিভাবে তা ব্যবস্থাপনা হবে, তা স্পষ্ট করা হয়েছে।

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ শিক্ষার মান উন্নয়নে ফি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং তাদের মধ্যে সঠিকভাবে শিক্ষা সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নতুন ফি নীতিমালা প্রবর্তিত হয়েছে। চলুন, এই নতুন ফি এবং নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

২৩টি নতুন ফি নির্ধারণ

বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টিউশন ফি ছাড়াও ২৩টি নতুন ফি নির্ধারণ করেছে সরকার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফি
  2. মুদ্রণ ফি
  3. টিফিন ফি
  4. ম্যাগাজিন ফি
  5. ক্রীড়া ফি
  6. সাংস্কৃতিক উৎসব ফি
  7. জাতীয় দিবস উদযাপন ফি
  8. ক্লাব ফি
  9. লাইব্রেরি ফি
  10. কল্যাণ/দারিদ্র্য তহবিল ফি
  11. আইসিটি ফি
  12. বাগান ও বাগান পরিচর্যা ফি
  13. ল্যাবরেটরি ফি
  14. স্কাউট ফি
  15. কমনরুম ফি
  16. পরিচয়পত্র ফি
  17. নবীনবরণ-বিদায় সংবর্ধনা ফি
  18. চিকিৎসা সেবা ফি
  19. বিবিধ ফি
  20. উন্নয়ন ফি
  21. বিদ্যুৎ ফি
  22. শিক্ষা সফর ফি
  23. যাত্রী সেবা ফি

এই সব ফি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয় পূরণ করতে পারবে। তবে, প্রতিটি খাতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার্য করা হয়েছে, যেগুলো হবে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত।

৪টি ক্যাটাগরিতে নতুন ফি নির্ধারণ

নতুন নীতিমালায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হল:

  1. মাধ্যমিক (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
  2. মাধ্যমিক (নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
  3. কলেজ (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
  4. কলেজ (নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)

এ ছাড়া টিউশন ফি নির্ধারণে মহানগর ও জেলা সদরে আলাদা কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ফি আদায়ের প্রক্রিয়া তদারকি করবে।

মহানগর ও জেলা কমিটির ভূমিকা

নতুন নীতিমালায় টিউশন ফি নির্ধারণের জন্য মহানগর ও জেলা সদরে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এসব কমিটিতে থাকবে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাবিভাগের কর্মকর্তারা। মহানগর কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকবেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং সদস্যসচিব হিসেবে থাকবেন আঞ্চলিক উপপরিচালক। জেলা কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকবেন জেলা প্রশাসক, এবং সদস্যসচিব থাকবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

এ ছাড়া, এই কমিটিগুলো নিশ্চিত করবে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ফি আদায়ের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করছে এবং কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন অতিরিক্ত ফি আদায় না করে।

ব্যাংক হিসাব ও খাতভিত্তিক ব্যয়

নীতিমালায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা হলো, সব ফি আদায় করা টাকা একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি কোনো একক খাতে বার্ষিক আদায় ১০ লাখ টাকার বেশি হয়, তবে সেই খাতের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে।

এছাড়া, আদায়কৃত অর্থ শুধুমাত্র খাতভিত্তিক ব্যয় করা যাবে, অর্থাৎ এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। এটি নিশ্চিত করবে যে ফি আদায়ের অর্থ সঠিকভাবে শিক্ষার উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

এই নতুন ফি নীতিমালা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সুশৃঙ্খল এবং স্বচ্ছ ফি ব্যবস্থাপনার সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে, শিক্ষকরা এবং অভিভাবকদেরও সচেতন থাকতে হবে যাতে তারা কোন ধরনের অতিরিক্ত ফি আদায় না করেন। সঠিকভাবে এই নীতিমালা কার্যকর হলে, শিক্ষার পরিবেশ আরও ভালো হবে এবং শিক্ষার্থীরা আরও সুষ্ঠু এবং সঠিকভাবে তাদের শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারবে।