রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের আগে বেশ আলোচনা চলছিল যে পাকিস্তানের কোন পেসার কত উইকেট নেবেন। বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে টেস্টের স্কোয়াডে ৬ পেসার রাখা হয়েছিল, এবং রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তান ৪ পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছিল। কিন্তু সেই ম্যাচে পাকিস্তানের পেসাররা যেন দর্শক হয়ে রইলেন, কারণ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এবং স্পিনাররা উজ্জ্বল পারফরম্যান্স প্রদর্শন করলেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল একটি অসাধারণ জয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ৫৬৫ রান করে (মুশফিকুর ১৯১, নাসিম ৩-৯৩) এবং ৩০ রানে ০ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানকে পরাজিত করে। পাকিস্তান ৪৪৮ রান করে ৬ উইকেট হারিয়ে (রিজওয়ান ১৭১*, শাকিল ১৪১) এবং পরে ১৪৬ রান করে (রিজওয়ান ৫১, মেহেদি ৪-২১, শাকিব ৩-৪৪) হেরেছে ১০ উইকেটে।

বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা রান কম করেননি, তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে তারা পিছিয়ে পড়েন। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে রানপাহাড় গড়ে ওঠে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনাররা একের পর এক উইকেট তুলে নেন। পাকিস্তানের পেসারদের উপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে, বাংলাদেশের স্পিনাররা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। বাংলাদেশ এই টেস্টে ১০ উইকেটে ঐতিহাসিক জয় লাভ করে, যা তাদের পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম জয়।

ম্যাচের মূল বিষয়

চতুর্থ দিন

চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট পাকিস্তানের ব্যাটিংকে চাপে ফেলেছিল। মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রান দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানকে ১৪৬ রানে আউট করার জন্য বাংলাদেশের বোলাররা চমৎকার পারফরম্যান্স দেখান।

পঞ্চম দিন

পঞ্চম দিনে, বাংলাদেশের স্পিনাররা, শাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ, পাকিস্তানের বাকি সাতটি উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। তারা মাঠের পরিস্থিতি এবং বলের স্পিনের সুবিধা গ্রহণ করে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন-আপকে একেবারে ভেঙে দেন।

নাহিদ রানা তার গতির জন্য পরিচিত, এবং ১৫০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে বোলিং করে বাবর আজমকে আউট করেন। শাকিব তার ধারাবাহিক বোলিং দিয়ে এবং মেহেদি তার আছড়ে পড়া অফব্রেক দিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেন।

ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত

প্রথম সেশন

বাংলাদেশের পেসাররা প্রথম সেশনেই পাঁচটি উইকেট নিয়ে জয়ী হওয়ার পথ তৈরি করেন। সাইম আইউব চতুর্থ দিনে আউট হয়ে যাওয়ার পর, শান মাসুদও সুরঞ্জন মাহমুদের হাতে আউট হন। পরবর্তীতে, বাবর আজমের ফাঁসানো সুযোগটি লিটন দাস হাতছাড়া করেন, কিন্তু বাবর দ্রুত আউট হয়ে যান।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে, পাকিস্তানের একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে। সৌদ শাকিল ও আব্দুল্লাহ শফিক দ্রুত আউট হন। রিজওয়ান কিছু শক্তিশালী শট খেলেন, কিন্তু তিনি দ্রুত আউট হয়ে যান। শেষে, মেহেদি হাসান মিরাজ পাকিস্তানের বাকি উইকেটগুলি তুলে দিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।

বাংলাদেশের জয়ের পরের ঘটনা

জাকির হাসান ও শাদমান ইসলাম সহজেই বাংলাদেশকে জয় এনে দেন। জাকির তিনটি চার মারেন এবং শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত করেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের জয়

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩০ রান, যা তারা দ্রুত অর্জন করে জয়লাভ করে। পাকিস্তানের মাটিতে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয় এবং আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের সপ্তম জয়।

টেস্টের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত

  • প্রথম ইনিংস: পাকিস্তান ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। বাংলাদেশ ৫৬৫ রানে অলআউট হয় এবং ১১৭ রানের লিড নেয়।
  • দ্বিতীয় ইনিংস: পাকিস্তান ১৪৬ রানে অলআউট হয়। বাংলাদেশ ৩০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় কোনো উইকেট না হারিয়ে জয়লাভ করে।

দলের পারফরম্যান্স

বাংলাদেশের স্পিনারদের পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়। সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে ১৪৬ রানে অলআউট করেন। মুশফিকুর রহিমের প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সাহায্য।

সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজের রেকর্ড

সাকিব আল হাসান বর্তমানে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক, তার মোট উইকেট সংখ্যা ৭০৭। সাকিবের সাথে মেহেদী হাসান মিরাজও দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন, যা বাংলাদেশ দলের জন্য গর্বের বিষয়।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রাপ্তি

এই জয় বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন মাইলফলক। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম ১০ উইকেটে জয় এবং আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের ২০তম জয়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং বোলারদের দুর্দান্ত কৃতিত্ব এই জয় নিশ্চিত করেছে।

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের এই জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই জয় বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এই জয় একটি বড় পদক্ষেপ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪৪৮/৬ (ডিক্লে)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬৫

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ১৪৬ (লিড ২৯)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ‍্য ৩০) ৬.৩ ওভারে ৩০/০ (জাকির ১৫ *, সাদমান ৯ *)

ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।

বিদেশের মাঠে বাংলাদেশের টেস্ট জয়

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ঐতিহাসিক জয়
প্রতিপক্ষভেন্যুজয়ের ব্যবধানসাল
পাকিস্তানরাওয়ালপিন্ডিউইকেট২০২৪
নিউজিল্যান্ডমাউন্ট মঙ্গানুই৮ উইকেট২০২২
জিম্বাবুয়েহারারে২২০ রান২০২১
শ্রীলঙ্কাকলম্বো৪ উইকেট২০১৭
জিম্বাবুয়েহারারে১৪৩ রান২০১৩
ও. ইন্ডিজকিংসটাউন৯৫ রান২০০৯
ও. ইন্ডিজগ্রানাডা৪ উইকেট২০০৯

 

কিছু প্রশ্ন এবং উওর

১. বাংলাদেশ কখন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয় অর্জন করেছে?

উত্তর: ২০২৪ সালের রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয় অর্জন করেছে।

২. রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশের কতো রান প্রয়োজন ছিল জয় পেতে?

উত্তর: বাংলাদেশের জয় পেতে মাত্র ৩০ রান প্রয়োজন ছিল।

৩. পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে কত রানে অলআউট হয়?

উত্তর: পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে অলআউট হয়।

৪. মুশফিকুর রহিম কত রান করেন রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম ইনিংসে?

উত্তর: মুশফিকুর রহিম ১৯১ রান করেন।

৫. বাংলাদেশের কোন স্পিনাররা রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন?

উত্তর: সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

৬. বাংলাদেশ কোন দেশের মাটিতে প্রথম ১০ উইকেটের জয় পেলো?

উত্তর: বাংলাদেশ পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম ১০ উইকেটের জয় পেলো।

৭. বাংলাদেশের ইতিহাসে এই জয় কেমন একটি মাইলফলক?

উত্তর: এই জয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ২০তম জয় এবং পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম জয়।

৮. বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান কতটি টেস্ট খেলেছে?

উত্তর: পাকিস্তান বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩টি টেস্ট খেলেছে।

৯. রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের ইনিংস ঘোষণা কত রানে হয়েছিল?

উত্তর: পাকিস্তান ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে।

১০. সাকিব আল হাসান বর্তমানে কোন তালিকায় শীর্ষে আছেন?

উত্তর: সাকিব আল হাসান বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক।

১১. বাংলাদেশ কত রান করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় পায়?

বাংলাদেশ ৫৬৫ রান করে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে পরাজিত করে।

১২. মুশফিকুর রহিম কত রান করেন?

মুশফিকুর রহিম ১৯১ রান করেন।

১৩. পাকিস্তান কত রান করে?

পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৪৪৮ রান করে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রান করে।

১৪. ম্যাচের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের কেমন পারফরম্যান্স ছিল?

পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের বোলাররা পাকিস্তানকে ১৪৬ রানে অলআউট করে জয় নিশ্চিত করেন।

১৫. নাহিদ রানা কিসের জন্য পরিচিত?

নাহিদ রানা তার দ্রুত গতির বোলিংয়ের জন্য পরিচিত।

১৬. পাকিস্তানের কিভাবে উইকেট পড়েছিল?

পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা শাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজের স্পিন আক্রমণের কারণে উইকেট হারান।

১৭. মুশফিকুর রহিমের রান কিভাবে দলের জয় নিশ্চিত করে?

মুশফিকুর রহিমের বড় ইনিংস বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রান যোগ করে, যা দলের জয় নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

১৮. বাংলাদেশের স্পিনাররা কিভাবে পারফর্ম করে?

বাংলাদেশের স্পিনাররা, শাকিব ও মেহেদি, দুর্দান্ত স্পিন এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন-আপ ভেঙে দেন।

১৯. ম্যাচের প্রধান মুহূর্তগুলো কি ছিল?

প্রধান মুহূর্তগুলো ছিল মুশফিকুর রহিমের বড় ইনিংস, পাকিস্তানের দ্রুত উইকেট পড়া, এবং বাংলাদেশের বোলিংয়ের চমৎকার পারফরম্যান্স।

২০. বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করার পর কি ঘটে?

বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর, জাকির হাসান ও শাদমান ইসলাম সহজেই জয় নিশ্চিত করেন এবং শেষ উইকেটটি পেয়ে জয় পূর্ণ করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।