বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। তাই, দেশের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি সতর্ক করেছেন যে, যদি দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হয়ে যায়, তবে এর ফলে এক বড় বিপদ আসতে পারে। ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন, যেখানে তিনি দেশের উন্নয়ন এবং সঠিক রাজনীতির জন্য একসাথে কাজ করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, রাজধানীর বড় মগবাজারে অবস্থিত আল ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বৈষম্যহীন সমাজ ও নতুন বাংলাদেশ গড়তে, আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।” জামায়াতের আমির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হলে ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি হবে, যা দেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নয়

ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস করা হবে না। তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বাঘের মতো বাঁচবেন, বিড়ালের মতো নয়।” অর্থাৎ, সকল নেতা-কর্মীদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দৃঢ়তার সাথে নিজেদের কাজ করতে হবে।

তিনি জামায়াতের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, তাদের দল সবসময় স্বচ্ছ রাজনীতি করে এসেছে। আর এজন্যই বারবার জামায়াতের ওপর আঘাত এসেছে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের রাজনৈতিক চরিত্র ঠিক রাখা, কারণ একমাত্র সৎ নেতৃত্বের মাধ্যমেই দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব।

দেশে দুর্নীতি মুক্তির প্রয়োজন

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “দুর্নীতির ক্যানসার উপড়ে ফেলতে হবে,” এবং এর জন্য রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চরিত্র সঠিক করতে হবে। তিনি শক্তিশালী ভাষায় বলেন, “একদিকে জনগণকে অধিকার এনে দেবো, আবার সেই অধিকার পকেটে চুরি করবো—এটা হবে না।” তাঁর মতে, যদি নেতারা সৎ এবং দুর্নীতিমুক্ত হন, তবে দেশও দুর্নীতিমুক্ত হবে।

৭ নভেম্বরের ইতিহাস এবং জামায়াতের সংগ্রাম

৭ নভেম্বর, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি করেছিল। জামায়াতের আমির ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী সরকার সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হরণ করে। তার মতে, এই সমস্ত ঘটনাগুলি ইতিহাসের একটি মর্মস্পর্শী অধ্যায়।

ডা. শফিকুর রহমান আরও জানান যে, জামায়াত তাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে, এবং তারা সব সময় দেশ ও জাতির স্বার্থে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে। তবে, জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন নেমে এসেছে। স্বাধীনতার পর, জামায়াতকে দু’বার নিষিদ্ধ করা হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা সবসময় পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেছে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে চেয়েছে।

দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও গণমানুষের অধিকার

গত ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেশের প্রতি তাদের দেশপ্রেম এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর ভূমিকা দেশের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তায় অমূল্য। তবে, সরকারের কাছে তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন—দুর্নীতির অবসান। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের অধিকার রক্ষা করা, তবে একে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়।

রাজনৈতিক ঐক্য এবং ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৭ নভেম্বরের সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, সে সময় অপশক্তি স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও সশস্ত্র বাহিনী তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিল। তবে সেলিম উদ্দিনের মতে, ষড়যন্ত্র এখনও চলছে এবং দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে, সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

তিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, “৭ নভেম্বরের চেতনা আমাদের সাহস দিয়েছে, এবং আমরা এই চেতনায় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করব।”

নিষ্কলঙ্ক রাজনীতি এবং জনগণের অধিকার

এবং, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যের সমাপ্তি টেনে বলেন, দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা এবং নিষ্কলঙ্ক রাজনীতি করা একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে বৈষম্যহীন সমাজ গড়া সম্ভব। তিনি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান, একত্রিত হয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে। দেশের স্বার্থে যে কোনো ধরনের বিভাজন এবং দ্বন্দ্ব দেশকে আরও সংকটে ফেলবে।