আগামী বছর থেকে মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন আসছে

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

আগামী বছর মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যবইয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। প্রাথমিক স্তরের বই পরিমার্জন হলেও এতে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। তবে, আগামী ডিসেম্বরে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা হবে তিন ঘণ্টার মধ্যে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে এবং বাকি ৩০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে শিখনকালীন কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে যে, এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই নতুন নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে, যাতে মূল্যায়নসহ অন্যান্য বিষয় বিস্তারিতভাবে জানানো হবে।

বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছে, বর্তমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তাই তারা ২০১২ সালের পুরোনো শিক্ষাক্রমকে প্রাধান্য দিয়ে কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বইয়ের পরিবর্তন:

বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা ছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর এই পরিকল্পনা পরিবর্তিত হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না, শুধু প্রচ্ছদ পরিবর্তন হবে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলো প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করা হবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে এবং নতুন শিক্ষাক্রমের বই থাকবে না। পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই দেওয়া হবে। এনসিটিবি ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মাধ্যমিকে হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক উপন্যাস ‘১৯৭১’ যুক্ত করা হতে পারে বলে আলোচনা চলছে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য:

বর্তমানে নবম শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীরা আগামী জানুয়ারিতে দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা নির্ধারণ করবে। তাদের জন্য ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই পরিমার্জন করে দেওয়া হবে। নবম শ্রেণির শেষ পর্যায়ে যাওয়ার কারণে এবং দশম শ্রেণিতে নতুন বই পাওয়ার জন্য, এই শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি পড়বে। এ জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি তৈরি করা হচ্ছে যাতে এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যে তা শেষ করা যাবে।

এনসিটিবি ইতিমধ্যে পাঠ্যবই পরিমার্জনের জন্য একটি দল কাজ করছে। এই দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আছেন।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গ্রেডিং পয়েন্ট

 
শ্রেণি বিরতিলেটার গ্রেডগ্রেড পয়েন্ট
৮০-১০০এ+
৭০-৭৯
৬০-৬৯এ-৩.৫
৫০-৫৯বি
৪০-৪৯সি
৩৩-৩৯ডি
০-৩২এফ

পরীক্ষার নতুন নিয়মাবলী:

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার জন্য পাঁচ ঘণ্টা এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য চার ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই বছরের শেষের পরীক্ষাগুলো হবে তিন ঘণ্টার মধ্যে। লিখিত পরীক্ষায় প্রেক্ষাপটনির্ভর প্রশ্ন এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং ৩০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে শিখনকালীন কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে।

এনসিটিবি মডেল প্রশ্ন প্রস্তুত করবে এবং বিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে পরীক্ষা নেবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে শিখনকালীন কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে, যা অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপনা বা অন্যান্য মাধ্যমে হতে পারে। পূর্ববর্তী শিখনকালীন মূল্যায়ন বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে যোগ করা হবে না। নতুন শিখনকালীন মূল্যায়ন গণনায় নেওয়া হবে।

উচ্চমাধ্যমিকের বই:

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে, তবে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যবই এখনও ছাপা হয়নি এবং সিলেবাসও মেলেনি। বাংলা, ইংরেজি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত হয়। ২০১৪ সাল থেকে বাংলা সাহিত্য পাঠ, ২০১৫ সাল থেকে ইংলিশ ফর টুডে এবং ২০২১ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বই এখনও শিক্ষার্থীদের পাঠ্য। নতুন বইয়ের পরিমার্জন কাজ চলছে এবং কিছু বিষয় পরিবর্তন হবে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বই প্রস্তুত আছে, তবে কিছু বিষয় পরিবর্তিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাবিদরা বইয়ের পরিমার্জন কাজে সহায়তা করছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।