বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ জটিল। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনও ১১৭টি মামলা চলছে। এসব মামলার মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮০টি মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলি বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৪ লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে ধীরগতিতে। তারেক রহমান আগেই জানিয়েছেন যে, তিনি আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফিরবেন না। বিএনপির নেতারা এ ব্যাপারে তারেক রহমানকে সমর্থন করছেন এবং আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দলের নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। তারা চান যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যে সব মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮০টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক কারণে এসব মামলায় জড়িত হয়েছেন। বিএনপির আইনজীবীরা দাবি করছেন, এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল।
এদিকে, খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে ছিলেন। পরে তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার অভিযোগ উঠেছিল। মামলায় দাবি করা হয়েছিল যে, এতিমদের জন্য পাওয়া অর্থ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আদালত এই মামলায় খালেদা জিয়াকে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিল।
শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা রয়েছে। এসব মামলার কারণে বিএনপির নেতৃত্বের উপর চাপ বেড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটি কমিটি গঠন করেছে, যাতে রাজনৈতিক কারণে হওয়া ‘হয়রানিমূলক’ মামলাগুলি প্রত্যাহার করা যায়। জেলা পর্যায়ের কমিটিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। কিন্তু এখনও মামলার প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আইনজীবীরা বলছেন, এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল এবং তারা দ্রুত এর সমাধান চান।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলাগুলি বর্তমানে একই অবস্থায় রয়েছে। তারা সরকারের কাছে এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য দাবি জানাচ্ছেন।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলে বোঝা যায়, বিএনপি এখন এক কঠিন সময়ে আছে। মামলার সংখ্যা বাড়ছে এবং নেতৃত্বের ওপর চাপও বেড়ে যাচ্ছে। বিএনপি নেতারা চেষ্টা করছেন যাতে দলের নেতা-কর্মীরা হতাশ না হন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেন।
বর্তমানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তারা চাচ্ছেন যে, আদালতে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া সব মামলা সঠিকভাবে বিচার করা হোক। রাজনৈতিকভাবে এ বিষয়গুলো সুষ্ঠু হতে পারে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের এই অস্থিরতা কিভাবে শেষ হবে, সেটি দেশের সাধারণ মানুষের জন্যও উদ্বেগের বিষয়।
সবশেষে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছেই। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দুপক্ষই নিজেদের অবস্থান সঠিক করতে কাজ করছে। আশা করা যায়, দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম