বদনজর মানে খারাপ দৃষ্টি। অনেক মানুষ আছে, যারা খারাপ উদ্দেশ্যে অন্যকে দেখে। তারা যখন খারাপভাবে তাকায়, তখন তার প্রভাব আমাদের জীবনে নেতিবাচক হতে পারে। কুরআন এবং হাদিসে এর সত্যতা পাওয়া যায়। আজ আমরা জানব কিভাবে আমরা বদনজর থেকে নিজেদের এবং আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে পারি, কুরআনি দোয়া ও আমলগুলো ব্যবহার করে।
বদনজর কেন হয়?
বদনজর, মানে অন্যের প্রতি হিংসার দৃষ্টি। যখন কেউ অন্যের সুখ, সৌন্দর্য বা সফলতা দেখে এবং মনে মনে ঈর্ষা করে, তখন সেই দৃষ্টির প্রভাব পড়তে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে এই খারাপ দৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে কিছু আয়াত আছে, যা বদনজরের সত্যতা তুলে ধরে। যেমন, সুরা কলমের ৫১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “কাফেররা যখন উপদেশবাণী শোনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টির মাধ্যমে তোমাকে আছড়ে ফেলবে।”
বদনজরের প্রভাব
বদনজরের কারণে অনেক সময় মানুষের স্বাস্থ্য খারাপ হয়। এমনকি ছোট শিশুরা, যারা কোমলমতি, তারাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “তোমরা বদ নজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর।” (ইবনে মাজাহ)
বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া
নবীজি (সা.) আমাদের জন্য কিছু বিশেষ দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, যা আমরা বদনজর থেকে বাঁচতে ব্যবহার করতে পারি।
- দোয়া পড়ার সময়:
- বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা মিন শাররি কুললি নাফসিন আউ আইনিন হাসিদিন।
- উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা মিন শাররি কুললি নাফসিন আউ আইনিন হাসিদিন।’
অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন।
- আরেকটি দোয়া:
- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ।
- উচ্চারণ: ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’
অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছি।
بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ. উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা মিন শাররি কুললি নাফসিন আউ আইনিন হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরকিকা’,
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: ’বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।’
কুরআন থেকে রক্ষা পেতে আমল
আমরা যদি কুরআন এবং কিছু বিশেষ সুরা পড়ি, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে বদনজর থেকে রক্ষা করবেন। নিচে কিছু কুরআনি আমল উল্লেখ করা হলো:
- সুরা ফাতিহা
- আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৫)
- সুরা বাকারা, শেষের দুই আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬)
- সুরা ইখলাস
- সুরা ফালাক
- সুরা নাস
প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় এসব পড়া আমাদেরকে বদনজরের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
শিশুদের জন্য বিশেষ যত্ন
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বদনজর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই তাদেরকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ দোয়া পড়া উচিত। নবীজি (সা.) ছোটদের জন্য দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন। যেমন, তিনি হজরত হাসান এবং হোসাইন (রা.)-কে এই দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন। এই ধরনের দোয়া আমাদের বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সামগ্রিক সুরক্ষা
আমাদের নিজেদের এবং পরিবারের সুরক্ষার জন্য উচিত, সকাল এবং সন্ধ্যায় আল্লাহর কাছে বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করা। বিশেষ করে যারা আমাদের চারপাশে আছে, তাদের প্রতি আমাদের খারাপ দৃষ্টি যেন না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
শেষ কথা
বদনজর একটি বাস্তব বিষয়, যা আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আল্লাহর দেয়া দোয়া ও কুরআনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের রক্ষা করতে পারি। প্রতিদিন নিয়মিত দোয়া এবং কুরআনের আমল করার মাধ্যমে আমরা বদনজরের প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব। আল্লাহ আমাদের সকলকে নিরাপদ রাখুন এবং হেফাজত করুন। আমিন।