চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে শুক্রবার একটি বিশাল গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে আটটি দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন উপস্থিত সবাই। তারা ঘোষণা করেছেন, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সমাবেশের পর ঢাকা অভিমুখে একটি লংমার্চ করা হবে।

সমাবেশের উদ্দেশ্য

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, যিনি বলেন, “যদি আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করা হয়, তবে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই মাঠ থেকে স্বাধীনতার ছয় দফা দাবি উঠেছিল। আজ এখানে আমরা সনাতনীদের দাবির পক্ষে একত্রিত হয়েছি। আমাদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে, আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব।”

সমাবেশে আলোচিত আট দফা দাবি হলো:

  • সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার: দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
  • সংখ্যালঘু কমিশন সুরক্ষা আইন: সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।
  • সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন: সংখ্যালঘুদের জন্য একটি আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট: হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
  • দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার: দেবোত্তর সম্পত্তির আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয়: প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয় নির্মাণ করতে হবে।
  • ছুটি: দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দিতে হবে।
  • সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের আধুনিকায়ন: এই শিক্ষা বোর্ডের আধুনিকায়ন করতে হবে।

সমাবেশের পরিবেশ

সমাবেশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নিয়েছেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে সমাবেশে এসেছেন। “আমার মাটি, আমার মা, এ দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না”—এই ধরনের স্লোগান সমাবেশের মেজাজ আরও গাঢ় করে দিয়েছে। সমাবেশের শুরু থেকেই লালদীঘি মাঠ ও আশপাশের এলাকা ভরে গেছে মানুষের ভিড়ে। সেখানে বিভিন্ন স্লোগানের ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।

বক্তাদের বক্তব্য

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “কেউ যদি আমাদের উৎখাত করতে চায়, তাহলে এ দেশের পরিস্থিতি আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মতো হবে।” তিনি সমাবেশে উপস্থিত সবার কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানলে আমরা আর চুপ থাকব না।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা চারটি মূলনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা ন্যায্যতার অভাব অনুভব করছি। হিন্দুদের অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলার সুযোগ আমাদের নেই।”

অন্যান্য বক্তারাও তাদের বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন দুর্বলতা ও সাম্প্রতিক ঘটনার সমালোচনা করেন। তারা একযোগে বলেন, “এদেশে আমাদের ১৩ শতাংশ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে আসন চাই।”

সক্রিয়তা ও আন্দোলনের আহ্বান

সমাবেশে উপস্থিত বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও বক্তা নতুন প্রজন্মকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। তারা বলেন, “প্রত্যেক এলাকায় যুব গোষ্ঠী গড়ে তুলুন। আমাদের দেবালয় আমরা নিজেদের রক্ষা করব।”

পটিয়া পাঁচরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ বলেন, “এই দেশের মাটি আমাদের। এই মাটি রক্ষায় আমরা রাজপথে থাকব।” এছাড়া, কৈবল্যধাম আশ্রমের মহারাজ কালিপদ ভট্টাচার্য বলেন, “ঐক্যবদ্ধ হয়ে সনাতনী সমাবেশকে উজ্জীবিত করতে হবে।”

চট্টগ্রামের এই গণসমাবেশ শুধু একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়, বরং এটি একটি আদর্শ ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনের এক বড় পদক্ষেপ। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত, সেটিই প্রমাণিত হয়েছে এই সমাবেশের মাধ্যমে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে তারা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অটল রয়েছেন।