আরব সাগরের উত্তরাংশে সম্প্রতি একটি গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা বর্তমানে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘আসনা’, যা পাকিস্তানের দেওয়া নাম। ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’র বর্তমান অবস্থান

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুরের দিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ গুজরাটের ভুজ অঞ্চল থেকে ১৯০ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে এবং পাকিস্তানের করাচি থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

ভারতের পরিস্থিতি

ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’র প্রভাবে ভারতে গুজরাট অঞ্চলে ইতোমধ্যে অতি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গুজরাটের জামনগর, সুরাট, পোরবন্দর, মোরবি, স্বর্ণক এবং কুচ জেলার অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আইএমডির (ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর) জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ রামাশ্রয় যাদব জানিয়েছেন, কচ্ছ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি।

পাকিস্তানের পরিস্থিতি

পাকিস্তানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সিন্ধেও ‘আসনা’ আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, সিন্ধের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক বর্ষণ হতে পারে এবং কিছু স্থানে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে প্রভাব

বাংলাদেশে ‘আসনা’ ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও, এর প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ উত্তর-পশ্চিম দিকে গিয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। এর ফলে ৩ বা ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি বাড়তে পারে।

অতীতের ঘূর্ণিঝড়

আরব সাগরের উত্তরাংশে ১৮৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগস্ট মাসে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি একটি বিরল ঘটনা। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর শক্তিশালী প্রতিরোধের জন্য নিম্নচাপগুলো ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে না।

পরবর্তী পদক্ষেপ

গুজরাটের পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে। জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মীরা বন্যার্তদের সাহায্য করছেন।