আমি এখন বাংলাদেশের আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করব, বিশেষ করে একটি নতুন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে। গত কিছু দিন ধরে আমরা দেখছি যে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, যা পরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আবহাওয়া গবেষকরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডানা’। কাতারের দেওয়া এই নামের অর্থ হলো ‘বড় মুক্তা’।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বা উড়িষ্যা দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে। যদি ঘূর্ণিঝড়টির বেশিরভাগ অংশ উড়িষ্যার দিকে চলে যায়, তবে বাংলাদেশের উপকূলের উপর প্রভাব কম থাকবে। কিন্তু যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে যায়, তাহলে কিছুটা বেশি প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে।

গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর বেশি পড়বে। তিনি আরও বলেন, ঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত করলেও এটি বাংলাদেশের উপকূলেও কিছু প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম দেখা যাচ্ছে।

এদিকে আবহাওয়াবিদ জেবুন্নেছা জানিয়েছেন, ঝড়টি সোমবার রাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে এবং উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ডান দিকে বাঁক নিয়ে এগিয়ে আসছে। এর প্রভাবে উপকূলে হালকা বৃষ্টিপাতও শুরু হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে বিভিন্ন আবহাওয়াবিদ বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, এটি দেরিতে উপকূলে আঘাত হানতে পারে, বৃহস্পতিবারের পর। তাদের মতে, এই ঝড়ের গতিপথ এখনও পরিবর্তন হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল হতে শুরু করেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আমাদের দেশের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার হতে পারে, যা দমকা হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। যদি ঝড়টি দক্ষিণের দিকে বাঁক নেয়, তাহলে এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ঘূর্ণিঝড়টি যদি বুধবার রাতের মধ্যে শক্তিশালী হয়, তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এটি আঘাত হানতে পারে। তবে বর্তমানে আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।

এটি উল্লেখযোগ্য যে, ১৮৯১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে মোট ৯৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে ১৯টি বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেও তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল, যা আমাদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা।

এখন আমরা সবাই আশাকরি, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ আমাদের দেশে খুব বেশি ক্ষতি না করে চলে যাবে। তবে আমাদের উচিত সতর্কতা অবলম্বন করা এবং আবহাওয়ার খবর নিয়মিত অনুসরণ করা। যেমন, যাদের উপকূলের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে, তাদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সবার জন্য প্রার্থনা করি, যেন এই ঝড় সবার জন্য নিরাপদ থাকে।