বিপদ যখন আমাদের জীবনে আসে, তখন একমাত্র আল্লাহর সাহায্যই আমাদের প্রকৃত মুক্তি দিতে পারে। বিপদ বা কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে বিভিন্ন দোয়া ও উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। এখানে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া এবং তাদের পদ্ধতি আলোচনা করব যা আপনাকে বিপদের সময় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে।
বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
মহামারি একটি বড় বিপদ, যা প্রায়শই জনস্বাস্থ্যের উপর অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভাব ফেলে। এটি এমন এক অবস্থা যা সারা বিশ্বে একটি আকস্মিক এবং চরম পেরেশানি তৈরি করে। মহামারির সময়, মানুষকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, যেখানে সকল বিপদ একত্রিত হয়ে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে, সমাজ এবং স্বাস্থ্য সংস্থা গুলোকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। মহামারি প্রায়ই একটি বড় বিপদের আকার ধারণ করে এবং এতে সারা পৃথিবীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। সুতরাং, আসন্ন চরম বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কুরআন ও হাদিসে বিপদের সময়ে পড়ার দোয়া
১. সুরা বাকারার আয়াত ১৫৫: আল্লাহ বলেন, “আর আমরা তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।” এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে বিপদ আসবে, কিন্তু ধৈর্য ধারণ করা জরুরি।
২. দোয়া থেকে মুক্তি: রাসুলুল্লাহ (সা.) বিপদগ্রস্ত হলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। যেমন, তিনি বলেছেন, “হে আল্লাহ, আমাকে সবরের শক্তি দান করো।” (মুসনাদে আহমাদ) বিপদ কামনা না করে, বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাওয়া উচিত।
৩. ৭০টি বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া: যে ব্যক্তি এই দোয়াটি পড়বে, সে সত্তরটি বিপদ থেকে মুক্তি পাবে। দোয়াটি হলো:
لا إله إلا الله وحده لا شريك له الملك وله الحمد يحي ويميت وهو حي لا يموت بيده الخير وهو على كل شيء قدير
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলক, ওয়ালাহুল হামদ, ইউহই ওয়া-ই মিতু, বিয়াদিহিল খাইর, ওহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, কোনো শরিক নেই। তার জন্য রাজত্ব ও প্রশংসা। তিনি জীবন দেন, মৃত্যু দেন। তিনি জীবিত আছেন, কখনো মারা যাবেন না। সমস্ত কল্যাণ তার নিয়ন্ত্রণে এবং তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
৪. দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তির দোয়া: যে ব্যক্তি বাজারে এই দোয়া পড়বে, তার আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লেখা হবে এবং দশ লাখ গুনাহ মুছে যাবে।
لا حول ولاقوة الا بالله ولاملجأ ولامنجا من الله الا اليه
উচ্চারণ: লা হাউলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি ওয়ালা মালজাআ ওয়ালা মানজাআ মিনাল্লাহি ইল্লাহ ইলাইহি।
৫. দুঃশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির দোয়া: কানজুল উম্মালে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতটি ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে পাঠ করলে আল্লাহ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হৃদয়কে প্রশান্তি দান করবেন।
لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন। অর্থ: একমাত্র তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারী।
অতিরিক্ত দোয়া ও আমল
৬. দোয়া যখন বিপদ আসে: হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে যেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা দোয়া পাঠ করে, তখন আল্লাহ তাকে তার বিপদ দূর করে দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে, তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।'”
৭. তওবা ও ইস্তিগফার: নবীজি (সা.) বলেছেন, “আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওয়াআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।” এর অর্থ: “ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয়ই সহজ নয়। কিন্তু যাকে তুমি সহজ করে দাও, তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও।”
৮. মোতবুত দোয়া: বিভিন্ন দোয়া যেমন ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম’, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করলে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না।
৯. কঠিন বিপদের সময় দোয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় দোয়া করতেন:
اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَاتَكِلْنِىْ اِلَي نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَ أَصْلِحْ لِيْ شَانِي كُلُّهُ لا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরঝু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি; ত্বারফাতা আইন; ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লুহু; লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা।