ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এটি কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আসুন আমরা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
ডেঙ্গু হলে যে কারণে মানুষ মারা যায়
১. ভাইরাসের প্রভাব
ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত চারটি রূপে ছড়িয়ে পড়ে: ডেঙ্গু ক্লাসিক, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং ডেঙ্গু ডেথ সিনড্রোম। সাধারণত, ডেঙ্গু ক্লাসিক হলে রোগী হালকা অসুস্থতার শিকার হয়, কিন্তু ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম গুরুতর অবস্থায় চলে যেতে পারে। এই দুটি রূপে রক্তপাত হতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২. সময়মত চিকিৎসার অভাব
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি সাধারণত ফ্লুর মতো হয়, যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, এবং শরীরে ব্যথা। অনেক সময় রোগী এটি বুঝতে পারেন না এবং চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করেন। ডেঙ্গুর গুরুতর রূপের লক্ষণগুলি যেমন রক্তপাত, তীব্র পেটের ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট, এ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। তাই সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব
ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের পূর্বে ডেঙ্গু হয়েছে, তাদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু যদি তারা একাধিকবার ভিন্ন ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে তাদের জন্য সমস্যা বাড়তে পারে। তাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
৪. চিকিৎসা না পাওয়া
গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের অনেক সময় দ্রুত চিকিৎসা দরকার হয়, যেমন প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার অভাব বা সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
৫. স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা
বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো দুর্বল। প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। এই কারণে অনেক রোগী গুরুতর অবস্থায় চলে যান এবং মৃত্যু ঘটে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঝুঁকি বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধি পায়, যেমন ভাইরাসের প্রভাব, সময়মত চিকিৎসার অভাব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা। তাই, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি অত্যন্ত জরুরি। সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে হবে, যাতে তারা ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি বুঝতে পারেন এবং দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দ্বারস্থ হন।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম