দাঁতে জমে থাকা হলুদ বা বাদামি পাথর, যা আমরা দাঁতের টার্টার বলে জানি, অনেকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যাটি হতে পারে আমাদের অযত্নের কারণে। আমাদের মুখের ভিতরে খাদ্য কণা, জীবাণু এবং থুতুর মধ্যে থাকা প্রোটিন একসঙ্গে মিলে তৈরি করে প্লাক। এই প্লাক যদি নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে এটি শক্ত হয়ে দাঁতে পাথর হিসেবে জমে যায়। আপনি যদি ভাবেন, “আমি কীভাবে দাঁতের পাথর পরিষ্কার করতে পারি?”, তাহলে কিছু সহজ ও কার্যকরী উপায় রয়েছে, যা আমি এখানে জানাচ্ছি।

দাঁত পাথর পরিষ্কার করার উপায়

প্রথমত, দাঁতের পাথর পরিষ্কার করার জন্য কিছু সামগ্রী দরকার হবে। যেমন:

  • বেকিং সোডা
  • লবণ
  • হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড
  • পানি
  • টুথব্রাশ
  • ডেন্টাল পিক
  • অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ
  • কাপ

প্রথম ধাপ: এক কাপের মধ্যে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এরপর গরম পানিতে টুথব্রাশটি ভিজিয়ে এই মিশ্রণ দিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করুন। ব্রাশ করার পর কুলকুচি করে নিন।

দ্বিতীয় ধাপ: এক কাপ হাইড্রোজেন পেরোক্সাইডের সঙ্গে আধা কাপ হালকা গরম পানি মিশিয়ে মুখে নিয়ে এক মিনিট রাখুন। এরপর আধা কাপ পানি দিয়ে কুলকুচি করে ফেলুন।

তৃতীয় ধাপ: ডেন্টাল পিক দিয়ে দাঁতের হলুদ টার্টার ধীরে ধীরে ঘষে তুলুন। তবে, মাড়ির ক্ষতি না হওয়ার জন্য সাবধান থাকতে হবে।

চতুর্থ ধাপ: সবশেষে অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করুন। এতে আপনার মুখ ফ্রেশ হবে এবং ব্যাকটেরিয়া কমবে।

এছাড়া, স্ট্রবেরি এবং টমেটোও দাঁতের জন্য ভালো। স্ট্রবেরি বা টমেটো দাঁতে ঘষে পাঁচ মিনিট রেখে তারপর কুলি করে ফেলুন। এতে দাঁতের পাথর নরম হয়ে যাবে।

তবে শুধু ঘরোয়া পদ্ধতি নয়, দাঁত স্বাস্থ্যকর রাখতে কিছু নিয়মও মেনে চলা উচিত। দিনে অন্তত দুবার দাঁত মাজুন, এবং প্রতিবার দুই মিনিট করে দাঁত মাজুন। তিন মাস পর পর টুথব্রাশ বদলান। ফ্লুয়োরাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি ছয় মাসে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।

কিছু খাবারও দাঁতে পাথর জমার সম্ভাবনা বাড়ায়। যারা বেশি মিষ্টি, আলু ও ময়দার খাবার খান, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হতে পারে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারও দাঁতের পাথর জমায় সাহায্য করে। সুতরাং, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকা উচিত।

যদি আপনি দাঁতে পাথর জমা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়েন, তাহলে দ্রুত একজন দন্ত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তারা স্কেলিং করে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। কিন্তু ঘরোয়া উপায়ও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

এখন, আমি আপনাদের কাছে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের কথা বলবো।

১. বেকিং সোডার ব্যবহার: বেকিং সোডা একটি প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জার। এক টেবিল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে ভেজা টুথব্রাশে নিয়ে দাঁত মাজুন। এটি দাঁতে জমে থাকা প্লাক পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

২. কমলার খোসা: কমলার খোসা দাঁতের জন্য খুব উপকারী। তাজা কমলার খোসা দাঁতে ঘষতে পারেন, এতে দাঁত সাদা হয়ে উঠবে।

৩. তিল: এক মুঠো তিল মুখে নিয়ে কয়েক মিনিট চিবিয়ে রাখুন। এটি দাঁত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

৪. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: টমেটো, স্ট্রবেরি ও কমলা একসঙ্গে ম্যাশ করে দাঁতে লাগালে তা ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে এবং মুখের দুর্গন্ধও দূর করবে।

দাঁতের যত্নে সচেতন থাকলে অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক নিয়মে দাঁত পরিষ্কার করলে, আপনার দাঁত স্বাস্থ্যকর ও ঝকঝকে থাকবে।

এখন আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, দাঁতের পাথর পরিষ্কার করা খুবই সহজ। নিয়মিত যত্ন নিলেই এই সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলা সম্ভব। তাই, আজ থেকেই আপনার দাঁতের যত্ন শুরু করুন!