বর্ষাকালে যখন আকাশে মেঘের ভিড় বেড়ে যায়, তখন আমাদের দেশে রোগের প্রকোপও বাড়ে। এই সময়ে মশার সংখ্যা বাড়ে এবং ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বর্ষায় অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হন। কিন্তু, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কি করে তা বুঝবেন? এডিস মশা কামড়ানোর পর কত সময় পরে জ্বর হয়, এই প্রশ্নের উত্তর জানতে অনেকেই উদ্বিগ্ন।

ডেঙ্গু এবং জ্বরের সময়কাল

ডেঙ্গু জ্বরের মূল বাহক হলো এডিস মশা, বিশেষ করে এডিস এজিপ্টি। যখন এই মশা কামড়ায়, তখন তা ডেঙ্গু ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবাহিত করে। কিন্তু, এডিস মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাবেরা গুলনাহার বলেন, “এডিস মশা কামড়ানোর পর থেকে লক্ষণ দেখা দিতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে।” এই সময়কে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়। সাধারণত, এডিস মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর দেখা দেয়, যা সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় দিন স্থায়ী হয়।

ডেঙ্গুর জীবাণু কতদিন সক্রিয় থাকে?

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন রয়েছে: ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। একজন ব্যক্তি তার জীবনে সর্বাধিক চারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। যখন একজন ব্যক্তি প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তখন তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, “যতদিন রক্তে ভাইরাস থাকবে, ততদিন রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে।” অর্থাৎ, রক্ত থেকে ভাইরাস নির্মূল না হলে জ্বর সারবে না।

জ্বর হলে কি করণীয়?

জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং দুর্বলতা অনুভূত হয়। এই সময়ে হালকা গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের ব্যথা কমে যায় এবং পেশীগুলি শিথিল হয়। তবে খুব বেশি জ্বর হলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা উচিত নয়। যদি গোসল করতে না পারেন, তাহলে ভেজা তোয়ালে দিয়ে গা মুছে নেওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

জ্বরের চিকিৎসা

জ্বর হলে প্রথমে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। যদি দুই-তিন দিন পরেও জ্বর না কমে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। বর্ষাকালে ডেঙ্গুর মতো রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জ্বরের প্রতি অবহেলা করা উচিত নয়।

মশার জীবনচক্র

এডিস মশা গড়ে ১৫ থেকে ৪০ দিন বাঁচে। তাপমাত্রার ওপর এডিস মশার আয়ু নির্ভর করে। সাধারণত, শীতকালে এডিস মশা বেশি বাঁচে, কিন্তু গরম কালে এডিস মশার বৃদ্ধি এবং বংশবিস্তার দ্রুত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা দিনে ও রাতে উভয় সময় কামড়াতে পারে।

ডেঙ্গু ছোঁয়াচে নয়

ডেঙ্গু একটি ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি শুধু মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে এই রোগ ছড়ায় না। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের স্পর্শ করলে বা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে অন্য কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে না। তাই, এডিস মশার বাহিরে অন্য কোন উপায়ে ডেঙ্গু ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই।

শেষ কথা

বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। তাই, আমাদের সচেতন থাকা উচিত। মশার কামড় থেকে বাঁচার চেষ্টা করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং জ্বর হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। ডেঙ্গু বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাই, এই বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ দিয়ে চলুন, সুস্থ থাকি!