বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে গেছে। ঢাকা শহরের গুলিস্তান এলাকায় আজ এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ১৯১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য পুরো রাজধানীসহ সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে, একদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন—দুই পক্ষই একই দিনে গুলিস্তানে কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে।
আসুন, পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে জানি।
কী ঘটছে গুলিস্তানে?
আজ ১০ নভেম্বর, রবিবার, আওয়ামী লীগ তাদের নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে এক বিক্ষোভ কর্মসূচি ডাক দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা দুপুর ৩টায় সেখানে একটি মিছিল করবে। তবে এই কর্মসূচি কোনো সহজ বিষয় নয়, কারণ এটি সাথে সাথে একটি পাল্টা কর্মসূচির জন্ম দিয়েছে।
অপরদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, তারা একই স্থানে দুপুর ১২টায় গণজমায়েত করবে। তাদের দাবি—অগণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের বিচারের। ফলে একে অপরকে বিরোধিতা করার কারণে, সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
কেন বিজিবি মোতায়েন?
ঢাকা শহরের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য, সরকার ১৯১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করেছে। বিজিবি হলো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, একটি আধাসামরিক বাহিনী, যাদের মূল কাজ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে, তাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা হয়েছে। সরকার মনে করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়া ঠেকানো যাবে।
বিজিবি সদস্যরা ইতিমধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় উপস্থিত হয়ে নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে। কিছু সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, রাত থেকেই গুলিস্তানে ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা অবস্থান নেওয়া শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: কী উদ্দেশ্য?
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তা মূলত নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে। নূর হোসেন ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, যিনি ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা শহরে শহীদ হন। তাঁর মৃত্যু দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে। তাই প্রতি বছর এই দিনটি স্মরণ করা হয়। আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি মূলত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণের দাবিতে। তারা ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যেখানে মিছিলের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা বলা হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে একটি গণজমায়েত করার পরিকল্পনা করছে। তাদের মূল দাবি হলো, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিচার। ছাত্ররা মনে করছে, বর্তমান রাজনৈতিক দলটি গণহত্যাকারী এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতিতে, গুলিস্তানে দুই পক্ষের কর্মসূচি পালনের সম্ভাবনা দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি
এছাড়া, সরকারও তাদের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেছে। প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলম ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি কোনো ধরনের মিছিল বা সমাবেশ করার চেষ্টা করে, তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ এখন ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে পরিচিত এবং তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
এছাড়া, সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও ফেসবুকে লিখেছেন, যে কেউ যদি আওয়ামীর পক্ষে সমাবেশ করতে আসে, তবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এবং বিজিবি পূর্ণ শক্তি দিয়ে ব্যবস্থা নেবে।
কী ঘটেছিল ৫ আগস্ট?
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় রাজনৈতিক আন্দোলন ঘটে। ছাত্র-জনতার এক তীব্র বিক্ষোভ আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ওই সময়ের পর থেকে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে কোনো বড় কর্মসূচি আয়োজন করেনি। তবে আজকের এই কর্মসূচির ঘোষণা তাদের ফের সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি
এভাবে একে একে দুটি বিপরীত পক্ষ গুলিস্তানে সমাবেশ করার চেষ্টা করছে, যা যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের দিকে ইঙ্গিত করতে পারে।
বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারের আশা, জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তবে, এখন সবকিছু নির্ভর করছে দুই পক্ষের কার্যক্রম এবং তাদের আচরণ কেমন হয় তার উপর।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম