ডিমের বাজারে অস্থিরতা যেন এক নতুন রূপ নিচ্ছে। গত দুদিন ধরে খুচরা বাজারে ডিমের দাম ছিল ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। কিন্তু সরকারের নজরদারিতে দাম কিছুটা কমে এসে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, ডিমের আড়তগুলোও খুলে গেছে এবং বিক্রির কাজ শুরু হয়েছে। তবে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম এখনো কার্যকর হয়নি, ফলে ভোক্তাদের এখনও বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে।

বাজারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বেড়েছে—এমন কিছু নয়। বাজারে যথেষ্ট ডিম রয়েছে, তবে দাম যখন বেশি ছিল, তখনো সরবরাহ কম ছিল না। গত কিছুদিন ধরে সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়ে গিয়েছিল এবং কিছু ব্যবসায়ী বেশি লাভের জন্য টাকা লুটে নিয়েছে।

পর্যায়দাম (টাকা)
উৎপাদক পর্যায়১০.৯১
পাইকারি পর্যায়১১.০১
খুচরা পর্যায়১১.৮৭
খুচরা বাজার১৬০-১৬৫
প্রতি ডজন১৪২.৪৪

সরকার মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করেছে। উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। নতুন এই দাম বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এখন থেকে ভোক্তাদের প্রতি ডজন ডিম কিনতে হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।

মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান জানিয়েছেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু, একদিন আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে ডিমের দাম ২০০ টাকার কাছাকাছি ছিল, আর এখন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকার মধ্যে। একটি ডিমের দাম ১৩ থেকে ১৪ টাকা।

সরকারি দরের চেয়ে এখনো ডজনপ্রতি ১৭.৫৬ থেকে ২২.৫৬ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। নয়াবাজারে একজন ক্রেতা হাসান বলেছেন, “বাজারে ডিমের দাম নিয়ে কত অস্থিরতা। বিক্রেতারা দাম বাড়ায়, আবার কমায়। সরকার দাম নির্ধারণ করলেও তা মানা হয় না। সবকিছুতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।”

মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানীর তেজগাঁও পাইকারি ডিমের আড়তে বিভিন্ন জায়গা থেকে ডিমের ট্রাক আসতে শুরু করেছে। বুধবার ভোর পর্যন্ত বিক্রির কাজ চলছিল। আগের দুদিন ব্যবসায়ীরা আড়ত বন্ধ রেখেছিল, তবে প্রশাসনের চাপের কারণে তারা আবার খুলে গেছে। কিন্তু, সরকারি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে না। পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমলেও তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে।

তেজগাঁও আড়তের একজন বিক্রেতা শাহ নেওয়াজ বলেন, “আমি ১২ টাকায় ডিম কিনে এনে ১১ টাকা ১ পয়সা বিক্রি করতে পারবো না। করপোরেট গ্রুপগুলো দাম বাড়ায়, তাই আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।” তিনি আরো জানান, সেখানে ডিম আসতে অনেক হাত বদল হচ্ছে, যার ফলে দাম বাড়ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, উৎপাদক এবং ক্রেতার মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা রয়েছে। তাই, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা বাদে অন্য স্তরগুলো বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

১৬ সেপ্টেম্বর ডিমের দাম খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা, উৎপাদন পর্যায়ে ১০.৫৮ টাকা এবং পাইকারি পর্যায়ে ১১.১ টাকা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই দাম বাজারে কার্যকর হয়নি। নতুন দাম বুধবার থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।

ডিমের বাজারে এই অস্থিরতা সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে। ভোক্তারা যেভাবে দাম বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণের অভাব অনুভব করছেন, তাতে সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।