বর্তমান সময়ে ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সারা দেশে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কৃষকদের মধ্যে এই পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের খামার বন্ধ হয়ে যাবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। আসুন, এই সমস্যার গভীরে প্রবেশ করি এবং বিষয়টি বিশ্লেষণ করি।
ডিমের দাম বাড়ার কারণ
বর্তমানে ডিমের দাম বেড়ে গেছে এবং এটি দেশের মানুষের আলোচনার একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে পাইকারি বাজারে ডিমের জন্য ক্রেতাদের মধ্যে ভিড় দেখা যাচ্ছে। তবে, প্রশ্ন হলো—এই পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হয়েছে?
খাদ্য ও ওষুধের দাম
পোলট্রি শিল্পের মালিকদের সংগঠন বলছে, মুরগির বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের দামের পার্থক্য ডিমের দামে বড় পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানিয়েছেন, দেশে ১৩ হাজারের বেশি লেয়ার ফার্ম রয়েছে, কিন্তু গত দুই বছরে প্রায় ৬ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এই বন্ধ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো উচ্চ উৎপাদন খরচ।
বন্যার প্রভাব
বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডিম উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, পাহাড়ি ঢলজনিত কারণে বহু খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোল্ট্রি মালিকদের সংগঠন বলছে, ডিম উৎপাদনে অন্তত ৩০ শতাংশ ঘাটতি দেখা গেছে। তাই এই পরিস্থিতি দেশের বাজারে প্রভাব ফেলছে।
বাজারের কারসাজি
অনেক ব্যবসায়ী দাবি করছেন, বাজারে বিভিন্ন ধরনের কারসাজির মাধ্যমে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁরা মনে করেন, সরকারের নজরদারি কম থাকায় এই ধরনের অপকর্ম হচ্ছে। কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক রিপন কুমার মণ্ডল বলেছেন, “ডিমের বাজারে কিছু চক্র রয়েছে যারা দাম বাড়ানোর জন্য সক্রিয়।”
সরকারের আমদানি নীতি
ভারত থেকে ডিম আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো—এটি কি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে? সরকার জানিয়েছে, বাজারের দাম স্থিতিশীল করার জন্য তারা চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব নগণ্য।
ডিমের পাইকারি দামে বিশাল পরিবর্তন আসেনি। অধিকাংশ ক্রেতা বলছেন, আমদানির পরও বাজারে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। এক ক্রেতা বলেন, “ভারত থেকে ডিমের দাম এত কম, তাহলে আমাদের এখানে এত বেশি কেন?”
খামারিদের শঙ্কা
খামারিরা ভয় পাচ্ছেন যে, এই আমদানি তাদের খামারগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। সুমন হাওলাদার বলেন, “আমদানি করা হলে ক্ষুদ্র খামার বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার এটা করছে আমদানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য।”
সমাধানের পথ
ডিমের দাম কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা সরকারের কাছে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
- ফিডের দাম নিয়ন্ত্রণ: ফিডের দাম কমানো হলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমবে। বর্তমানে দেশে ফিডের দাম ভারতীয় মূল্যের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
- নজরদারি বৃদ্ধি: বাজারে কারসাজি রোধে সরকারকে কঠোর নজরদারি করতে হবে।
- বন্যার ক্ষতি মোকাবেলা: বন্যার কারণে উৎপাদনের ক্ষতির জন্য কৃষকদের সহায়তা করা প্রয়োজন।
- নিরপেক্ষ তদন্ত: বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত, যাতে মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যায়।
ভবিষ্যৎ
সুমন হাওলাদার আশা প্রকাশ করেছেন, নভেম্বরের শুরুতে ডিমের দাম ৮-৯ টাকায় চলে আসবে। কারণ, তখন বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়বে এবং ডিমের চাহিদা কমবে। তবে, এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে খাদ্য ও ওষুধের দাম, বন্যার প্রভাব এবং বাজারের কারসাজি উল্লেখযোগ্য। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে এবং সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জাকির হাসান