বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়ালকে “ঈদে মিলাদুন্নবি” হিসেবে উদযাপন করে থাকে। এটি মহানবী (সা) এর জন্মদিন হিসাবে পরিচিত। তবে, এই উদযাপনের ঐতিহাসিক ও ইসলামিক ভিত্তি নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। আসুন, বিস্তারিতভাবে জানি কীভাবে এবং কেন এই উদযাপন বিতর্কিত।

ঈদে মিলাদুন্নবির উদযাপনের পটভূমি

আমি কিছু বছর আগে ঢাকার ধানমন্ডির একটি মসজিদে এশার নামাজ আদায় করতে গিয়ে দেখেছিলাম, মসজিদটি জনাকীর্ণ। অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় মুসল্লিদের সংখ্যা ছিল দশগুণ বেশি। ইমাম সাহেবের কাছে জানতে পারলাম যে, আজ ১২ রবিউল আউয়াল, যা ঈদে মিলাদুন্নবি। এর অর্থ, আজ মহানবী (সা) এর জন্মদিনের উৎসব পালিত হচ্ছে।

বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও সিলেটের কিছু অংশে, ১২ রবিউল আউয়াল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। এসব অঞ্চলে পাড়া-মহল্লায় আনন্দ-উৎসবের ঢল নামে। “সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মিলাদুন্নবির ঈদ” এমন স্লোগানও শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই তেমন?

ঈদে মিলাদুন্নবির শর্তাবলী

ইসলামে ঈদ দুটি: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এ দুটি ঈদের বাইরে অন্য কোন ঈদ উদযাপন করা ইসলামে অনুমোদিত নয়। এ সম্পর্কে সহিহ হাদিস ও ইজমায়ে উম্মত রয়েছে। তাই ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপন করা ইসলামের মূলনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্মদিন: প্রকৃত তারিখ কী?

রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্মদিন নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকেই বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল ছিল তাঁর জন্মদিন। তবে আধুনিক গবেষণার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা) এর প্রকৃত জন্মদিন ছিল ৯ রবিউল আউয়াল, যা ২০ এপ্রিল, ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে পড়ে। মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিদ মাহমুদ পাশার গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, ১২ রবিউল আউয়াল ছিল বৃহস্পতিবার, এবং ৯ রবিউল আউয়াল ছিল সোমবার।

ঈদে মিলাদুন্নবির পালনের ইসলামিক দৃষ্টিকোণ

ইসলামে কোন ব্যক্তির জন্মদিন পালন করা অনুমোদিত নয়। এটি ক্রিস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধদের রীতি। নবী করিম (সা) এর জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারা কখনো নবী (সা) এর জন্মদিনে উৎসব পালন করেননি। এমনকি হিজরি ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের সময় হযরত উমর (রা) এর প্রস্তাবিত তারিখের ভিত্তিতে নবী (সা) এর জন্মদিন থেকে সন গণনা বাতিল করেন।

you can also read:

ঈদে মিলাদুন্নবী কেন পালন করা উচিত নয়?

১. ইসলামে ঈদ দুটি: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা ছাড়া অন্য কোন ঈদের অনুমোদন নেই।

২. ঈদের প্রকৃত তিথি: রাসুলুল্লাহ (সা) এর মৃত্যু দিবস ১২ রবিউল আউয়াল হলেও, ঈদে মিলাদ পালনের কোন ইসলামী ভিত্তি নেই।

৩. বেদআত: ঈদে মিলাদ পালন একটি বেদআত যা ইসলামে অনুমোদিত নয়। নবী (সা) এর সাহাবী বা তাবেয়িনগণ এই উদযাপন করেননি।

৪. বিদেশী রীতি অনুসরণ: ঈদে মিলাদ পালন করে ক্রিস্টানদের ‘বড়দিন’ বা হিন্দুদের ‘জন্মাষ্ঠমী’ এর অনুকরণ করা হয়।

ঈদে মিলাদ পালনের পরিণতি

ঈদে মিলাদ পালন ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী। কোরআন ও হাদিসের কোথাও এই দিন উদযাপনের কথা উল্লেখ নেই। এটি ইসলামের মূলনীতির বিকৃতি এবং অতিরিক্ত আয়োজন যা নবী (সা) এর আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।

সারকথা: ১২ রবিউল আউয়ালে ঈদে মিলাদ উদযাপন ইসলামী শরিয়তের বিরোধী কাজ। ইসলামের মূলনীতি অনুসরণ করে ঈদ শুধু দুটি এবং অন্য কোন উৎসব পালন করা পরিত্যাজ্য।