বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ ব্যবস্থা প্রতিবেদন

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

বন্যার কারণে ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে গেছে। সড়কগুলো পানির নিচে ডুবে আছে, কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর সমান। আশেপাশের দোকানপাট, হাসপাতাল এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিচতলাও পানিতে তলিয়ে গেছে। এই অবস্থায় মানুষ দারুণ দুর্ভোগে রয়েছে। সম্প্রতি ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে পানির অবস্থান দেখলে বোঝা যায় কতটা সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তারা যাচ্ছেন।

পানি কমতে শুরু করেছে

সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, ফেনীসহ অন্যান্য বন্যাকবলিত এলাকায় পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে নোয়াখালী এবং কিছু জায়গায় এখনও পানি বাড়ছে। অনেক মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন কারণ তাদের বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি সরে যায়নি। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শুকনা খাবার, পানি, এবং ওষুধ বিতরণ চলছে, কিন্তু অনেক দুর্গম এলাকায় মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও পরিসংখ্যান

বর্তমানে ১১টি জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দী। এতে করে ৫২ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এর মধ্যে কুমিল্লায় ৬ জন এবং চট্টগ্রামে ৫ জন। আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।

আশ্রয় কেন্দ্র ও চিকিৎসা ব্যবস্থা

বন্যার্তদের জন্য ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। চিকিৎসা সেবার জন্য ১১ জেলায় ৭৪৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ফেনী শহরে কয়েকটি সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও, বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের অভাবে মানুষ আরও সমস্যায় রয়েছে।

দুর্গত মানুষের অভিজ্ঞতা

বন্যার্ত মানুষদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিশুদ্ধ পানির অভাব। ফেনীর হারুন রশিদ বলেন, “পানি না থাকার কারণে আমরা খুব কষ্ট পাচ্ছি।” অনেক জায়গায় বাজারে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে।

সরকার ও সেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা

সরকার এবং সেচ্ছাসেবকরা একসাথে কাজ করছেন। জেলা প্রশাসন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও র‌্যাবও সাহায্য করছে। খাদ্য বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে, এসব কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট নয়।

আসন্ন ঝুঁকি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

বন্যার পর পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান বলেছেন, “বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসুখ-বিসুখ বাড়তে পারে।”

খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা

অক্সফামের জরিপে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জরুরি সহায়তার প্রয়োজন। সঠিক স্বাস্থ্যসেবা ও খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই খাদ্যের অভাবে কষ্টে আছেন।

ফলস্বরূপ অবস্থা

এই ভয়াবহ বন্যার ফলে ফেনী এবং নোয়াখালীতে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। পানির স্বচ্ছতা ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

পুনর্বাসন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সকল পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। ঘরবাড়ি মেরামত, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে আগামীতে আরও পরিকল্পনা ও কার্যক্রম প্রয়োজন।

বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রাফি ইসলাম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।