সম্প্রতি বাংলাদেশের ১১টি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। এর ফলে অনেক মানুষ বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে মোবাইল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে যে, বন্যাকবলিত ১০ জেলায় প্রায় ১১ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী জেলা, যেখানে প্রায় ৯২ শতাংশ টাওয়ার অচল।

মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণ

মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো বিদ্যুৎ–সংযোগের অভাব এবং টাওয়ার এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া। এসব টাওয়ার সচল রাখার জন্য যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন, তা না থাকায় নেটওয়ার্ক সচল করা যাচ্ছে না। এছাড়া, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় টাওয়ার সচল করার জন্য কাজ করছে, তবে যেসব এলাকা এখনো পানির নিচে রয়েছে, সেখানে কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলাসমূহ এবং টাওয়ারের সংখ্যা

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার মোট ১৩,২৪০টি মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে ১,৪৬১টি টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ফেনী জেলায় ৬৫৩টি টাওয়ারের মধ্যে মাত্র ৫৩টি টাওয়ার সচল রয়েছে, যা শতাংশের হিসেবে ৯১.৯ শতাংশ অচল।

নোয়াখালী জেলার ২১.৫ শতাংশ টাওয়ার, খাগড়াছড়িতে ১৫.২ শতাংশ টাওয়ার, কুমিল্লায় ১৩.৯ শতাংশ টাওয়ার এবং লক্ষ্মীপুরে ৭.১ শতাংশ টাওয়ার অচল রয়েছে। এছাড়া, মৌলভীবাজারে ৫.৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২.৭ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১.৭ শতাংশ, হবিগঞ্জে ০.৩ শতাংশ এবং সিলেটে ০.৬ শতাংশ টাওয়ার বন্যার কারণে অচল হয়ে গেছে।

সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা

বিটিআরসি জানিয়েছে যে, সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে টাওয়ার সচল করার জন্য সমন্বয়ের কাজ চলছে। তবে যেসব টাওয়ার এলাকা পানিতে ডুবে গেছে, সেসব এলাকা থেকে পানি না নামা পর্যন্ত টাওয়ার সচল করার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ফেনী জেলায় টাওয়ার সচল করার কাজটি চ্যালেঞ্জিং এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।

সিলেট এবং মৌলভীবাজার এলাকায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিটিআরসি মনে করে, পানি না নামা পর্যন্ত এই এলাকায় টাওয়ার সচল করার কাজ শুরু করা কঠিন হবে।

বন্যার প্রভাব ও করণীয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ১১টি জেলার বন্যায় প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অতিবৃষ্টি এবং উজানের পানির ঢলে এসব জেলার অনেক এলাকা ডুবে গেছে। এ অবস্থায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করার চেষ্টা করা, যাতে করে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ দ্রুত সাহায্য পায় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।

FAQ (Frequently Asked Questions):

বন্যার কারণে কোন কোন জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছে?

বাংলাদেশের ১১টি জেলার মধ্যে ১০ জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ফেনী জেলার মোবাইল টাওয়ারের কত শতাংশ অচল হয়ে পড়েছে?

ফেনী জেলার প্রায় ৯২ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে।

মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো টাওয়ার সচল করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বন্যায় মোট কত সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোন কোন জেলার টাওয়ার সবচেয়ে কম অচল হয়েছে?

সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে কম টাওয়ার অচল হয়েছে।

মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল না থাকার কারণে কী সমস্যা হচ্ছে?

মানুষ জরুরি সাহায্য ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছে না।

টাওয়ার অচল হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ কী?

বিদ্যুৎ–সংযোগের অভাব এবং টাওয়ার এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়া।

টাওয়ার সচল করতে কি আরও কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে?

বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত অনেক জায়গায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

টাওয়ার সচল করতে কত সময় লাগতে পারে?

ফেনী জেলার ক্ষেত্রে এটি চ্যালেঞ্জিং এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

সরকার উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।