ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও ফেনী এলাকার বিভিন্ন অংশ তলিয়ে গেছে। এর ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। চলুন বিস্তারিতভাবে জানি এই পরিস্থিতি সম্পর্কে।

প্লাবিত সড়ক ও যানজটের ভয়াবহতা

গতকাল, বুধবার (২১ আগস্ট) গভীর রাতে পানি বাড়তে শুরু করে এবং আজ, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকেই সড়ক তলিয়ে যেতে শুরু করে। বর্তমানে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নবগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। কিছু অংশে পানি হাঁটু পর্যন্ত উঠেছে, যার ফলে যানবাহন চলাচল ধীরগতিতে হচ্ছে এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ফেনীর লালপুল এলাকায়ও একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানে অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যা যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে আরো চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

স্থানীয় পরিস্থিতি ও কর্মকর্তাদের মন্তব্য

কুমিল্লার হাইওয়ে পুলিশ, বিশেষ করে অতিরিক্ত ডিআইজি খায়রুল আলম, জানান যে, পানি বাড়ার সাথে সাথে যানজটের সমস্যা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কুমিল্লা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য পাঠানো হয়েছে। যদিও হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত তদারকি করছে, তবুও পানির পরিমাণ এতটাই বেশি যে যান চলাচল ধীরগতিতে চলছে।

চৌদ্দগ্রামের মিয়া বাজার হাইওয়ে থানার ওসি এস এম লোকমান হোসাইন জানান, “মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, যা যানবাহন চলাচলকে ব্যাহত করছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছি, তবে পানি অনেক বেশি।”

কৃষি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ

অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে আসা পানির কারণে কুমিল্লার গোমতী নদী বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রায় ৪,০০০ হেক্টর কৃষি জমি পানিতে ডুবে গেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তাদের বাড়ি-ঘর ও খামারও পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে এবং জনগণকে সেখানকার অবস্থান নিতে বলা হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতি সম্প্রসারণ

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে ১০টি জেলা বন্যার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, সিলেট ও হবিগঞ্জ।

নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা আরো বেড়েছে এবং সাজেক এলাকায় দুই শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। ফেনী জেলা প্রশাসন সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চেয়েছে।

ভবিষ্যতের পূর্বাভাস

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে, আগামী তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এখনও বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুমিল্লার গোমতী নদীর কিছু অংশের বাঁধের দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

FAQ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বন্যার ফলে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে?

বন্যার কারণে সড়ক প্লাবিত হয়েছে, যা যানবাহন চলাচলে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করেছে। চরম যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

কী কারণে কুমিল্লা ও ফেনী এলাকায় বন্যা হচ্ছে?

ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে নদীগুলোর পানি বেড়ে গিয়ে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

মহাসড়কে কতটা পানি উঠে গেছে?

চৌদ্দগ্রাম এলাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার এবং ফেনীতে ৫ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

যানবাহন চলাচল কেমন রয়েছে?

যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে এবং দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

বন্যার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের কি অবস্থা?

বাড়ি-ঘর, কৃষি জমি ও খামার পানিতে তলিয়ে গেছে এবং আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন কি পদক্ষেপ নিয়েছে?

প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে এবং সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চেয়েছে।

ভবিষ্যতে বন্যা পরিস্থিতি কেমন হবে?

আগামী তিন দিনে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে, তবে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।

মহাসড়কে যানজট নিরসনের জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

হাইওয়ে পুলিশ অব্যাহতভাবে কাজ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

কোন কোন জেলার বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক?

খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, সিলেট ও হবিগঞ্জ।

স্থানীয় কৃষি ও জমির কী অবস্থা?

প্রায় ৪,০০০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, যা কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে।