আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। ফলে কারখানাগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে চলমান শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ৬০ টি কারখানা বন্ধ ছিল, কিন্তু আজ নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা কারখানাগুলিও চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত এবং আজ সকাল ২টা পর্যন্ত কোথাও কোনো আন্দোলনের খবর পাওয়া যায়নি।
গাজীপুরের পরিস্থিতি
কয়েকদিন ধরে গাজীপুর নগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল চলছিল। শ্রমিকরা নানা দাবিতে এই আন্দোলন করছিলেন। আজ সকালে শ্রমিকরা নিজেদের কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন, যা একটি ইতিবাচক সংকেত। কারখানার কর্তৃপক্ষ কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। গাজীপুরের দুই হাজারেরও বেশি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা রক্ষায় শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
শিল্পকারখানার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে সেনাবাহিনীর টহল চলেছে। শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহাম্মেদ জানিয়েছেন যে, ইবনে সিনা সহ কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সমস্যার সমাধান হলে এসব কারখানাও খুলে দেওয়া হবে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকার ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কারখানাটি কয়েকদিন ধরে বন্ধ ছিল। এছাড়া কিছু কারখানা শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
শ্রমিক অসন্তোষের পটভূমি
গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতার কারণ স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বলে জানা গেছে। কিছু রাজনৈতিক দল ও বহিরাগতরা শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কারখানায় হামলা চালিয়েছে। কিছু কারখানায় বেতন, হাজিরা, বোনাস, টিফিন ভাতা ও শ্রমিক ছাঁটাই নিয়ে সমস্যা ছিল, যা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
বিজিএমইএ ও সরকারের উদ্যোগ
বিজিএমইএ-এর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, শ্রমিকদের যে যৌক্তিক দাবি আছে, তা ধীরে ধীরে পূরণ করা হবে। সরকার ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে এবং সকল কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ-এর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, “আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করছি এবং তাদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আশুলিয়া ও গাজীপুরে একের পর এক সচিবালয়ে বৈঠক শেষে এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানান, শ্রমিকদের অস্থিরতা মোকাবেলা করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে, যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি
বর্তমানে গাজীপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কাজে ফিরে এসেছেন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজিএমইএ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনী মিলিতভাবে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।