[helpie_faq group_id=’186’/]

বাংলাদেশে রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে একটি সাধারণ কিন্তু সমালোচিত বিষয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই প্রথা আমাদের সমাজের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ অনুযায়ী, এই প্রথার কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, বিশেষত জেনেটিক ডিজঅর্ডার নিয়ে। এই প্রবন্ধে আমরা রক্তের সম্পর্কের বিয়ের ফলস্বরূপ উদ্ভূত জেনেটিক ডিজঅর্ডার, বিশেষ করে উইলসন ডিজিজ এবং অন্যান্য জেনেটিক অসুখের বিষয়ে আলোচনা করব।

১. রক্তের সম্পর্কের বিয়ে ও জেনেটিক ডিজঅর্ডার

একই পরিবারের মধ্যে বিয়ের ফলে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যখন দুই ব্যক্তি একে অপরের নিকট আত্মীয় হন, তাদের মধ্যে এক ধরনের জিনগত মিল থাকে। এতে করে কোনো একটি জিন যদি ডিজঅর্ডার বা রোগের জন্য দায়ী হয়, তা সন্তানের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। কিন্তু, যখন দুই ব্যক্তি একই পরিবারের হন, তাদের সন্তানের মধ্যে উক্ত জিনের ডিজঅর্ডার প্রকাশ পেতে পারে, কারণ দুই পক্ষ থেকেই রোগের সম্ভাব্য জিন পাওয়া যায়।

২. উইলসন ডিজিজ: একটি প্রেক্ষাপট

উইলসন ডিজিজ একটি জেনেটিক ডিজঅর্ডার যা শরীরে অতিরিক্ত কপার জমা হওয়ার ফলে ঘটে। এটি মূলত মস্তিষ্ক ও লিভারের ক্ষতি করে। এই রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত লিভার ও মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত। লিভারের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি, দুর্বলতা, পেটে তরল জমা হওয়া, পা ফুলে যাওয়া, ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া এবং চুলকানি। মস্তিষ্কের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্পন, পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, কথা বলতে সমস্যা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, উদ্বেগ এবং মনোবিকার।

৩. গবেষণার ফলাফল

সম্প্রতি,  একটি গবেষণায় ৫০ জন রোগীর মধ্যে ৩টি নতুন মিউটেশন শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ২টি বাংলাদেশে নতুন। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি ৩০ হাজার জনে একজন উইলসন ডিজিজে আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত বিএসএমএমইউতে প্রায় ২০০ জন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারে, তবে চিকিৎসা বন্ধ হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

৪. সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

রক্তের সম্পর্কের বিয়ে নিয়ে সামাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণও গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে, কিছু নির্দিষ্ট রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি মূলত সন্তানদের জেনেটিক সমস্যা থেকে রক্ষা করার জন্য। এছাড়া, চিকিৎসাবিজ্ঞানও একই ধরনের সঙ্কটের দিকে ইঙ্গিত করেছে। যুক্তরাজ্যে, নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের ফলে সন্তানের মধ্যে জেনেটিক সমস্যা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

৫. রক্তের সম্পর্কের বিয়ের সামাজিক প্রভাব

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, রক্তের সম্পর্কের বিয়েকে কিছু লোকের কাছে পরিবারের সম্পত্তি ও ব্যবসা সুরক্ষার একটি উপায় হিসেবে দেখা হয়। একই পরিবারের মধ্যে বিয়ের ফলে পরিবারের সম্পদ এবং সংস্কৃতি সংরক্ষিত থাকে বলে মনে করা হয়। তবে, এই ধরনের বিয়ের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে, যা আমাদের সমাজকে সচেতন করে তুলতে পারে।

রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কথা মনে রেখে, এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো উচিত। জেনেটিক ডিজঅর্ডার, বিশেষ করে উইলসন ডিজিজ, এই প্রথার কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় সঠিক চিকিৎসা এবং পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা ও আলোচনা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।