সিলেটের বিয়ানীবাজারে সিএনজি অটোরিকশা চালক হযরত আলী হত্যার মামলায় আদালত পাঁচজনকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ এর বিচারক শায়লা শারমিন এ রায় ঘোষণা করেন। এই রায়টি বিচারহীনতার দীর্ঘ দশ বছর পর এসেছে এবং এটি নিহতের পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

মামলার পটভূমি

২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট সিএনজি চালক হযরত আলী সিলেট থেকে বিয়ানীবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে রাত ১১টার দিকে কিছু যুবক কৌশলে তাকে ছুরিকাঘাত করে সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় হযরত আলীর মৃত্যু হয় এবং পরবর্তী দিন তার ভাই শুক্কুর আলী বিয়ানীবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন।

আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী জায়েদা বেগম জানান, মামলার শুনানিতে ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। নিহত হযরত আলীকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা

দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন আসামি হলেন:

  1. শহিদুল ইসলাম (২১), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের রওশন আলীর ছেলে
  2. সুমন আহমদ (১৯), দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাদশা মিয়ার ছেলে
  3. শিপু মিয়া (১৯), দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ফজিল বারীর ছেলে
  4. জাকারিয়া মুন্ন (২০), দক্ষিণ সুনামগঞ্জের হাজী মুসুক মিয়ার ছেলে
  5. মো. রুহল আমিন (২০), দক্ষিণ সুনামগঞ্জের হরমুজ আলীর ছেলে

আদালতের রায় এবং প্রতিক্রিয়া

আদালতের এই রায়ে নিহতের পরিবার খুশি প্রকাশ করেছে। শুক্কুর আলী বলেন, “আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম।” আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানান তারা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, “এই রায় সিলেটের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

মামলা প্রসেস এবং প্রমাণ

মামলায় মোট ২০ জন সাক্ষী ছিলেন, যার মধ্যে ১৮ জন আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিচারক যুক্তিতর্ক শেষে ৩০২/৩৪ ধারায় এই রায় ঘোষণা করেন। আসামিরা জামিনে ছিলেন এবং মামলার যুক্তিতর্কের দিন তারা আদালতে হাজির হননি।

হত্যার নেপথ্যে

হযরত আলীর মৃত্যুর ঘটনা সমাজে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এটি নিয়ে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন ছিলেন। অনেকেই মনে করেন, আসামিদের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।

শেষ কথা

সিলেটে সিএনজি চালক হযরত আলী হত্যার মামলার রায় শুধু নিহতের পরিবারের জন্যই নয়, বরং সমাজের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। বিচার দ্রুত হওয়া উচিত এবং আসামিদের যেন বিচার ব্যবস্থার হাত থেকে পালিয়ে যেতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।