যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে শক্তিশালী হারিকেন মিল্টনের আঘাতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। এই ঝড়ের ফলে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৬ জনের, যা স্থানীয় নিরাপত্তা বিভাগ নিশ্চিত করেছে। ৯ অক্টোবর রাতে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঝড়টি ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে। হারিকেনটির বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার। এটি সিয়েস্তা কি এলাকা থেকে শুরু হয়ে টাম্পা উপসাগরের দক্ষিণে আছড়ে পড়ে।

জাতীয় হারিকেন কেন্দ্র (এনএইচসি) জানিয়েছে, ঝড়টি বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শক্তি হারিয়ে ক্যাটাগরি ১-এ নেমে আসলেও ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছিল। ঝড়টি ফ্লোরিডার পুরো ভূখণ্ড অতিক্রম করে আটলান্টিক মহাসাগরে চলে গেছে।

ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনেক জায়গায় ক্রেন ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে একটি ক্রেন টাম্পা বে টাইমসের অফিস ভবনে ভেঙে পড়ে, যা ভবনের একাংশে বড় ধরনের ক্ষতি করে। এছাড়া, টাম্পা বে রেইসের ঘরের মাঠ ট্রপিকানা ফিল্ডের ছাদও উড়ে গেছে।

গভর্নর রন ডেসান্টিস জানিয়েছেন, ঝড়ের প্রভাবে কিছু এলাকায় ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং উপকূলীয় এলাকায় আট থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।

হারিকেন মিল্টনের আগমনের ফলে সেন্ট লুসি কাউন্টিতে অন্তত ১৯টি টর্নেডো আঘাত হানে, যার ফলে চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১২৫টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে আশ্বস্ত করেছেন যে, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে শিগগির সহায়তা পৌঁছে যাবে। তিনি সবাইকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া, ঝড় এবং তার পরবর্তী সহায়তা কার্যক্রম নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মিল্টন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি ১-এ রূপান্তরিত হয়ে আটলান্টিকের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে আগামী দিনগুলোতে আরও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মানুষকে।

এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগেই ফ্লোরিডায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে হারিকেন ‘হেলেন’। ২০০৫ সালে আঘাত হানা হারিকেন ‘ক্যাটরিনা’র পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঝড় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ‘হেলেন’র প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ২৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

হারিকেন মিল্টন ফ্লোরিডার জন্য এক বিশাল সংকট সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সরকার এবং উদ্ধারকর্মীরা ক্রমাগত কাজ করে চলেছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তবে, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য এটি একটি কঠিন সময়। আমাদের সকলের উচিত এই দুর্যোগের সময়ে তাদের প্রতি সহানুভূতি এবং সমর্থন প্রদান করা।