বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র সম্পাদকদের মতামত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সম্পাদকরা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য দুই থেকে তিন বছর সময় দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ২০ জন সম্পাদক মতবিনিময় করেন। বৈঠকের পরে শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন। তিনি বলেন, “সম্পাদকরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারকে কতদিন দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা নির্ধারণের জন্য ‘যৌক্তিক সময়’ দেখতে হবে। এ বিষয়ে তাঁদের মতামত অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর হতে পারে, তবে অনেকেই দুই থেকে তিন বছর সময় দেওয়ার পক্ষে।”
সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, “সংবিধান সংশোধন এবং আইন কমিশন, সংবিধান কমিশন, মিডিয়া কমিশন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে। এসব বিষয়ে নানা মতামত প্রদান করা হয়েছে।”
সম্পাদকরা উল্লেখ করেছেন যে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি, বিএসএস, ও রেডিওর মতো সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংবাদমাধ্যমগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাঁরা মিডিয়ায় কালাকানুন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন, বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং সাইবার সিকিউরিটি আইন থেকে সাংবাদিকদের নিপীড়ন সংক্রান্ত ধারা বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম জানান, “সম্পাদকরা আশা করেন, সংবিধান পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মানবাধিকার কমিশন সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশন যাতে ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায়, সেদিকে নজর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।”
এছাড়া, সম্পাদকরা সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে লেখালেখি করার জন্য মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে অনুরোধ করেছেন। শফিকুল আলম বলেন, “ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন যে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত এবং তিনি একটি ‘ভাইব্রেন্ট’ মিডিয়া দেখতে চান।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে মন্তব্যগুলি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখতে চাই, জাতি কী চায় এবং মিডিয়া এই বিষয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা চলতে থাকলে, সম্পাদকদের পক্ষ থেকে যে মূল প্রস্তাবগুলো উঠেছে তা হলো:
- সংবিধান সংশোধন – নতুন সংবিধান তৈরির প্রস্তাব।
- আইন কমিশন গঠন – নতুন আইন কমিশন ও সংবিধান কমিশন গঠন।
- মিডিয়া কমিশন – স্বাধীন সাংবাদিকতার নিশ্চয়তা।
- পুলিশ কমিশন – পুলিশের কার্যকারিতা বাড়ানো।
- নির্বাচন কমিশন সংস্কার – নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি।