রাজধানী ঢাকা শহরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ইসলামি মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলেম-ওলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এক বিশাল জমায়েত ঘটেছে। এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে যোগ দেন ধর্মীয় সমাবেশে। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের প্রচার, কওমি মাদরাসা এবং ইসলামী মূল্যবোধের রক্ষণাবেক্ষণ। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আলেমরা ইসলামের সঠিক পথের ওপর আলোচনা করেন এবং একত্রে দোয়া ও আল্লাহর রহমতের জন্য প্রার্থনা করেন।

সকালে শুরু হওয়া মহাসম্মেলন

মহাসম্মেলনটির কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়, তবে ভোর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষ আসতে শুরু করেন। তারা সারা রাত ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান। গুলিস্তান, কাকরাইল, শাহবাগ, নীলক্ষেত এবং সোহরাওয়ার্দীর বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ সম্মেলনস্থলে আসছিলেন। এমনকি, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা গুলোতে ট্রাফিক পুলিশও গাড়িগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে, যাতে সম্মেলনস্থলে আসতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয়।

শহরের রাস্তা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা

ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা গুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। শাহবাগ, নীলক্ষেত, ঢাকা মেডিকেল, সচিবালয় এবং হাইকোর্টের সামনে দিয়ে যেতে চাওয়া গাড়িগুলোর জন্য পুলিশ বিকল্প পথের ব্যবস্থা করে দেয়। এতে শহরের সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হলেও, সম্মেলন স্থলে সমাগমের জন্য এটি এক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল।

সম্মেলনে আলোচিত বিষয়

এই সম্মেলনটি মূলত ইসলামী দাওয়াত, তাবলিগের কাজ এবং কওমি মাদরাসাগুলোর সুরক্ষা এবং ইসলামী শিক্ষা প্রচারের লক্ষ্যে আয়োজিত হয়। কওমি মাদরাসাভিত্তিক আলেমরা সম্মেলনটির মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলামের সঠিক শিক্ষা পৌঁছানোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। সম্মেলনের আয়োজকরা এও ঘোষণা দেন যে, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা যদি দেশের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদরাসা শিক্ষক এবং আলেমরা সম্মেলনে একমত হয়ে ইসলামি মূল্যবোধের রক্ষণাবেক্ষণ এবং দ্বীনের হেফাজতের জন্য একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তারা আরও বলেন, ইসলামি ঐক্য এবং শান্তির কথা জানাতে সকল মুসলমানদের একত্রিত হতে হবে।

বিশিষ্ট আলেমদের উপস্থিতি

এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন দেশের নানা প্রখ্যাত আলেম-ওলামা। এদের মধ্যে আছেন আল্লামা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা মামুনুল হক এবং মাওলানা শওকত হোসাইন সরকারসহ আরও অনেকে। এই বিশিষ্ট আলেমরা দেশের মুসলমানদের ইসলামের সঠিক পথ অনুসরণের আহ্বান জানান এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন।

মাওলানা সাদকে নিয়ে উত্তেজনা

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মাওলানা সাদ কান্ধলভী তার অনুসারীদের নিয়ে প্রথম পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার দাবি জানান, যা কওমি মাদরাসাভিত্তিক আলেমরা সমর্থন করেন না। এই বিরোধিতার কারণে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসম্মেলন আয়োজন করেন, যাতে মুসলিম সমাজে বিভক্তি প্রতিরোধ করা যায় এবং ইসলামি ঐক্য বজায় রাখা যায়।

সামগ্রিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এই মহাসম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে ইসলামিক মূল্যবোধ, দাওয়াত ও তাবলিগের কাজকে আরও শক্তিশালী করা। এদিকে, সম্মেলনটি একটি বার্তা দিয়েছে যে, ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সম্মেলনের শেষে উপস্থিত সকল আলেমরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে দোয়া করেন, যাতে আল্লাহ তাআলা দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি, মঙ্গল এবং ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি করেন।

আজকের ইসলামি মহাসম্মেলনটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দাওয়াতি উদ্যোগ, যেখানে সারা দেশের আলেম-ওলামারা একত্রিত হয়ে ইসলামের সঠিক পথ এবং মুসলিম সমাজের একতার জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসম্মেলনটির আয়োজন একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দেশের মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এই ঐতিহাসিক সমাবেশে অংশ নিয়ে তারা ইসলামের সঠিক পথে চলার জন্য নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছেন।