ইসলামের মূল বিধানগুলোর মধ্যে জাকাত অন্যতম। এটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত। যদিও জাকাত ফরজ, তবে এটি সকলের উপর ফরজ নয়। শুধুমাত্র স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক ও সম্পদশালী মুসলমানদের ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ। চলুন, জাকাতের বিস্তারিত শর্তাবলী ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানি।

জাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী

জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। এসব শর্ত বুঝতে পারলে আমরা আরও ভালোভাবে জানতে পারবো, কাদের উপর জাকাত ফরজ।

১. মুসলিম হওয়া

জাকাত ফরজ হওয়ার প্রথম শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। কুফরি বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর জাকাত ফরজ নয়। ইসলামের ভিত্তিতে, শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই এটি প্রযোজ্য।

২. বালেগ হওয়া

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। ইসলামি ফিকহের মতে, শিশুদের ওপর জাকাত ফরজ নয়। তবে, তাদের সম্পদে জাকাত আদায় করতে অভিভাবকের দায়িত্ব থাকে।

৩. স্বাধীন হওয়া

জাকাত আদায় করতে হলে সম্পদশালীর স্বাধীন হওয়া জরুরি। দাস-দাসীর ওপর জাকাত ফরজ নয়।

৪. সম্পদের মালিকানা

জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের ওপর পূর্ণ মালিকানা থাকা আবশ্যক। যদি কোনো ব্যক্তি সম্পদে সম্পূর্ণ অধিকারী না হন, তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে না।

৫. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা

নিসাব হলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ। সাধারণত, সাড়ে সাত তোলা সোনা (৮৫ গ্রাম) অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (৫৯৫ গ্রাম) সমমূল্যের নগদ টাকা বা সম্পদ থাকলে, তার ওপর জাকাত ফরজ।

৬. এক বছরের অধিকারে থাকা

জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদটি এক চান্দ্র বছর ধরে মালিকের অধিকারেই থাকতে হবে।

৭. মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ

মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত যে সম্পদ থাকে, সেই অংশের ওপরই জাকাত ফরজ হয়।

৮. ঋণমুক্ত হওয়া

যদি কেউ ঋণে জর্জরিত হন এবং তার নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে না।

জাকাতের প্রকারভেদ

জাকাত মূলত চার ধরনের সম্পদের ওপর ফরজ:

  • স্বর্ণ ও রূপা: সোনার ও রূপার নির্দিষ্ট পরিমাণের ওপর জাকাত দিতে হয়।
  • নগদ অর্থ: ব্যাংকে থাকা টাকা ও অন্যান্য নগদ অর্থের ওপর।
  • বাণিজ্যিক পণ্য: ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর জাকাত দেওয়া হয়।
  • কৃষিপণ্য: জমিতে উৎপাদিত ফসলের ওপর নির্দিষ্ট শর্তে জাকাত দিতে হয়।

জাকাতের গুরুত্ব

জাকাত শুধু একটি আর্থিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং এটি ইসলামের সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম। এটি গরিব ও দারিদ্র্যের মধ্যে বৈষম্য কমাতে সহায়তা করে। জাকাত দেওয়ার মাধ্যমে ধনী ও গরীবের মধ্যে অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

কোরআনে জাকাতের নির্দেশনা

আল-কোরআনে জাকাতের বিষয়টি ৩২ বার উল্লেখ করা হয়েছে, যা এর গুরুত্বকে প্রমাণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় (যাকাত দাও) কর।” (সূরা বাকারা ২৬৭)

জাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি আমাদের সম্পদকে পবিত্র করে, দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান করে এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হলো, নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত অবশ্যই আদায় করা। জাকাত প্রদান করা মুমিনের পরিচয় এবং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায়।