বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করার জন্য একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে। এই প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করা। তারা মনে করছে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি দলের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে যুক্ত করা উচিত। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যা নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে। এতে ভোটাররা নিরাপদে এবং নির্ভরতার সঙ্গে ভোট দিতে পারবেন।

এছাড়া, জামায়াতে ইসলামী বলছে যে, বর্তমানে ব্যবহৃত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং এটি নির্বাচনের স্বচ্ছতা বিঘ্নিত করেছে। তাই তারা প্রস্তাব করছে যে, পুরনো ও পরীক্ষিত পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করতে হবে। যেমন, একজন সরকারি চাকরিজীবী যদি চাকরি ছাড়েন, তাহলে তাকে অন্তত ৩ বছর কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেওয়া যাবে না। এতে নির্বাচনের প্রতি জনগণের বিশ্বাস আরও বাড়বে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী একটি নির্দলীয় পদ্ধতি প্রস্তাব করছে। তাদের মতে, নির্দলীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে স্থানীয় পর্যায়ে সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এতে রাজনৈতিক বিভাজন কমবে এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠবে।

এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা ২০০৮ সালে চালু হওয়া যে নিয়ম, তা বাতিল করতে হবে। তারা মনে করেন, এই নিয়মটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে অনেক নতুন দলের সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে, যারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাব করছে যে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা উচিত। এই কমিটি নির্বাচনের জন্য সঠিক ও যোগ্য কমিশনার নির্বাচন করবে, যারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়া, জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে আয়োজন করার প্রস্তাবও রয়েছে। এটি নির্বাচনের পদ্ধতিকে আরও সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করবে। পাশাপাশি, এনআইডি ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিয়ে আসার কথাও বলা হয়েছে, যাতে ভোটারদের পরিচয় যাচাই করা সহজ হয়।

সব মিলিয়ে, জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রস্তাবনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তারা বিশ্বাস করেন, সঠিক পদক্ষেপ নিলে দেশের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের ভোটাধিকার আরও সঠিকভাবে প্রয়োগ হবে।

এভাবে, তারা আশা করেন যে, এই প্রস্তাবনা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা দেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। দেশের জনগণ তাদের অধিকার এবং কণ্ঠস্বরের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব পাবেন। এতে দেশের উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা আরও সহজ হবে।