জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর শিক্ষার্থীরা বর্তমানে নানা সমস্যার সম্মুখীন। বিশেষত, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাজেট সংক্রান্ত জটিলতায় তারা আন্দোলন শুরু করেছে। শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে এসে তাদের বিভিন্ন দাবির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
আজকের এই আন্দোলনের শুরুটা ছিল ১১ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে। শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রা শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর দিকে। তারা দাবি করে, তাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাদের মুল দাবি ছিল, ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট বৃদ্ধি করা। তবে, শিক্ষাসচিবের সঙ্গে দেখা না হওয়ার পর তারা সচিবালয়ের সামনে এসে অবস্থান নেয়।
শিক্ষার্থীদের মূল দাবিগুলো কী?
শিক্ষার্থীদের পাঁচটি প্রধান দাবি ছিল:
- সেনাবাহিনীর হাতে ক্যাম্পাস নির্মাণ: তারা চাচ্ছিলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীর দক্ষ কর্মকর্তাদের হাতে হস্তান্তর করা হোক।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধি: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা হওয়া উচিত।
- অবিলম্বে জমি অধিগ্রহণ: তারা বলেছেন, ক্যাম্পাসের জন্য অতিরিক্ত ১১ একর জমি অধিগ্রহণ করা দরকার।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি: ইউজিসি (বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) এর ঘোষিত পাইলট প্রকল্পে জবি’কেও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে।
- দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, স্বৈরাচারী সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া প্রজেক্ট ডিরেক্টর এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তারা চান, সেনাবাহিনী থেকে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হোক।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ এবং সচিবালয়ে বিক্ষোভ
শিক্ষার্থীরা, যাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, সকালে গণপদযাত্রা শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে। তারা বিক্ষোভ মিছিল করে এবং তাদের দাবির স্মারকলিপি শিক্ষাসচিবকে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, সচিব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করায় তারা অসন্তুষ্ট হয়ে সচিবালয়ের গেট বন্ধ করে দেয় এবং অবরোধ সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে, যেমন “আমিই কে, তুমি কে, জবিয়ান, জবিয়ান”, “মুলা না ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস”, “আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম”, ইত্যাদি। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, যদি তাদের দাবি না মানা হয়, তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবে।
প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে প্রবেশ করে এবং আলোচনা হয়
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সচিবালয়ে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে কথা বলে। এই বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানায়, সরকার তাদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও তিন দিন সময় চেয়েছে। তবে, আন্দোলনকারীরা বুঝিয়ে দেন যে, তারা পরবর্তী বৈঠকে তাদের দাবি পূরণের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা চায়। তারা আশা করছে, মঙ্গলবার ১২টায় এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বড় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
নাহিদ ইসলামের প্রতিশ্রুতি
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর বলেন, তাদের দাবি যৌক্তিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, খুব শিগগিরই তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে এবং সমস্যা সমাধান করা হবে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সচিবালয়ে অচলাবস্থা
শিক্ষার্থীরা যখন সচিবালয়ের গেট বন্ধ করে অবরোধ সৃষ্টি করেছিল, তখন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাইরে বা ভিতরে যেতে পারছিলেন না। পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে, তবে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ছিল শান্তিপূর্ণ।
আন্দোলনকারীদের শক্ত অবস্থান
এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তারা অধিকার ছাড়া কোনো কিছু মেনে নেবেন না। তারা বলছেন, তাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা হচ্ছে এবং তারা কোনো প্রকার আপস করতে রাজি নয়।
শেষ কথা
এটি স্পষ্ট যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য রাজপথে নেমেছে। তাদের দাবির মধ্যে আছে ক্যাম্পাস নির্মাণ, বাজেট বৃদ্ধি, অবৈধ চুক্তি বাতিল, এবং শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ। তাদের আন্দোলন যদি সফল হয়, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হবে। তবে, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হলে তারা আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারে। তাদের সংগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ এর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম