বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর এবং অবসরের বয়স ৫৯ বছর। সম্প্রতি, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে, যাতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবের পেছনের কারণ
বর্তমানে তরুণদের চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই বয়সের কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে, ৩৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণের প্রস্তাবটি তরুণদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সংগঠন বিএএসএ দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে আসছে।
বিএএসএ মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এই প্রস্তাবের সমর্থনে বলেন, “বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে ৭২.৩ বছর। এই পরিপ্রেক্ষিতে, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর করা হলে তা যৌক্তিক হবে।”
প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট
২০১২ সাল থেকে এই বিষয়ে আন্দোলন চলছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদও এই দাবিকে সামনে রেখে রাস্তায় নেমেছে। তবে, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সময়ে এই দাবিটি অগ্রাহ্য করেছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, “যদি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা হয়, তবে তারা চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে ৩৭ বছর পার হয়ে যাবে।” এই যুক্তির মাধ্যমে তিনি প্রস্তাবটি নাকচ করেছিলেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব মো. সাজ্জাদুল হাসান জানান, “সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এবং অবসরের বয়সসীমা নির্ধারণের কাজ মূলত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। আমরা বিএএসএ থেকে পাওয়া চিঠি জনপ্রশাসনে পাঠিয়েছি।”
দেশের পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড
বিশ্বের ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারিত রয়েছে। কিছু দেশে এটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। অবসরের বয়সসীমা বিভিন্ন বিভাগে ৬৫ থেকে ৭২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ৬৭ বছর। এই সকল তথ্য বিবেচনা করে, সরকারের উচিত ৩৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণের ব্যাপারে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আন্দোলনের ইতিহাস
বিগত ১৫ বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন নীতির কারণে মেধাবী কর্মকর্তাদের সঠিক পদোন্নতি ও উপযুক্ত পদে নিয়োগের সুযোগ পায়নি। ফলে, দেশে বৈষম্য, নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতা ভিত্তিক প্রশাসন গঠন সম্ভব হয়নি।
শেষ কথা
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার প্রস্তাবটি তরুণদের চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করবে এবং দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে। জনগণের আশা, সরকার এই প্রস্তাবটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং তরুণদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে।