জুমা হল ইসলামি ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত দিন। এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ দিন নয়, বরং এক একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন, যা আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকতের দিন হিসেবে বিবেচিত। বিশেষভাবে, এই দিনটি মুসলিমদের জন্য এক ধরনের সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবেও পরিচিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১০৮৪)

এদিনের ফজিলত এবং এর সাথে সম্পর্কিত আমলগুলো ইসলামিক শরিয়ত অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানরা এই দিনটিকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, তাওবা, ইবাদত, এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর উপর দরুদ পাঠ করার মাধ্যমে অতিবাহিত করেন। জুমার দিনটির গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে অর্জিত নেকির কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

জুমার দিনের বিশেষ ১০টি আমল সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. গোসল করা

জুমার দিন গোসল করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, তার গুনাহ মাফ করা হয়।” (বুখারি, হাদিস: ৮৭৭) গোসল না করলে, যদিও নামাজ হবে, তবুও তার পূর্ণ মর্যাদা পাওয়া যায় না।

২. উত্তম পোশাক পরিধান করা

জুমার দিনের সম্মান ও মর্যাদার অংশ হিসেবে উত্তম পোশাক পরা জরুরি। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিন সুন্দর পোশাক পরিধান করো, কারণ এটি আল্লাহর পথে শ্রদ্ধা জানানো।”

৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা

জুমার দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করা একটি প্রিয় সুন্নত। রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এই আমলটি করতেন এবং উম্মতকে উত্সাহিত করেছেন।

৪. মসজিদে দ্রুত যাওয়া এবং খুতবা শোনা

জুমার নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া এবং খুতবা শোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে প্রথমে মসজিদে পৌঁছায়, তার জন্য একটি উট কোরবানি করার মতো সাওয়াব লেখা হয়।” (বুখারি, হাদিস: ৯২৯)

৫. সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা

জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পড়বে, তার জন্য দুটি জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হবে।” (সুনানুল-বায়হাকি আল-কুবরা, হাদিস: ৫৭৯২)

৬. দোয়া করা

জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত থাকে, যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন। সুতরাং, এই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন যে কোন মুসলমান দোয়া করবে, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করবেন।” (বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)

৭. দরুদ পাঠ করা

জুমার দিন রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা বিশেষভাবে প্রশংসিত। রসুল (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমরা আমার ওপর বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ ফেরেশতারা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেয়।” (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ১৬৩৭)

৮. বেচাকেনা বন্ধ রাখা

জুমার নামাজের আজান শোনার পর বেচাকেনা বন্ধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিন নামাজের আজান হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে চলে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো।” (সুরা জুমআ, আয়াত: ৯)

৯. পিতা-মাতার কবর জিয়ারত

যারা পিতা-মাতাকে হারিয়েছেন, তাদের জন্য জুমার দিনে পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি জুমার দিন তার পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করা হয় এবং সে পিতা-মাতার প্রতি আনুগত্যশীল হিসেবে পরিগণিত হয়।” (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৭৯০১)

১০. দান-সদকা করা

জুমার দিনে দান-সদকা করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এটি আল্লাহর কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে দান-সদকা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী।” (জাদুল মায়াদ ফি হাদয়ি খায়রিল ইবাদ, ১৯৯৪)

জুমার দিন সঠিকভাবে ইবাদত করা: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

জুমার দিনটি একটি বিশেষ সুযোগ, যা মুসলমানদের আল্লাহর কাছ থেকে অশেষ রহমত লাভের জন্য। এই দিনটি কেবল নামাজের জন্য নয়, বরং সকল আমল একসাথে করে মহান আল্লাহর কাছে নৈকট্য লাভের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সুতরাং, এই দিনে সঠিকভাবে ইবাদত করার চেষ্টা করা উচিত এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের সঙ্গে নিজের জীবন পরিচালনা করা উচিত।