কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সঞ্জয় রায় সম্প্রতি গুরুতর একটি অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। অভিযোগ অনুসারে, তিনি খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ঘটনার পর সঞ্জয় রায়ের পরিবারে অস্থিরতা ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। সঞ্জয় রায়ের বৃদ্ধ মা তাঁর ছেলের কুকীর্তি শুনে বিস্মিত এবং হতবাক হয়েছেন।
সঞ্জয়ের পরিবারে এই কঠিন সময়ের পর, তাঁর দুই বোনও ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের একজন জানিয়েছেন, ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড হলে তারা তাঁর মরদেহও গ্রহণ করবেন না। সঞ্জয়ের দুই বোন পুলিশে কর্মরত বলে শোনা যায়। অনেকের দাবি, তাদের প্রভাবেই সঞ্জয়ের এমন কুকীর্তি ঘটেছে। কিন্তু তাঁদের একজন এসব দাবি মানতে নারাজ। তিনি সংবাদমাধ্যমকে ফোনে জানান, ভাইয়ের এমন কার্যকলাপের কারণে তাঁরা ভাইয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চান না।
সঞ্জয়ের মা মালতিদেবী তাঁর ছেলের সম্পর্কে বলেন, “আমার ছেলে মেধাবী ছিল। ক্লাসে সবসময় টপার ছিল। এমনকি টিভিতে যা শুনছি, তাতে আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমার ছেলে এমন কিছু করতে পারে। কোথা থেকে কীভাবে এটি ঘটেছে তা আমি জানি না। হয়তো কেউ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।”
সঞ্জয় রায়ের গ্রেফতারির পর তাঁর মানসিক অবস্থাও নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পুলিশ বলছে, সঞ্জয়ের অতীতের রেকর্ডও খারাপ ছিল এবং ধরা পড়ার পরেও সে বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছে। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সে বলেছেন, “ফাঁসি দিয়ে দিন।” এছাড়া, লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা সঞ্জয়ের কর্মকাণ্ড শুনে অবাক হয়েছেন।
সঞ্জয় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার হলেও, সে নিজেকে কলকাতা পুলিশের স্বশস্ত্র বাহিনীর এএসআই হিসেবে পরিচয় দিত। জানা গেছে, শম্ভুনাথ পণ্ডিত রোডে সঞ্জয়ের বাড়ির কাছেই সে একটি ব্যক্তিকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে কিছু হাজার টাকা নিয়েছিল। পরে ওই টাকা ফেরত চাইলে সঞ্জয় জানিয়েছিল যে সে কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, সঞ্জয় বিভিন্ন নেশায় আসক্ত ছিল এবং তার মোবাইল ফোন থেকে কলকাতা পুলিশে কর্মরত বেশ কয়েকজনের ফোন নম্বর উদ্ধার হয়েছে। সঞ্জয় পুলিশের ব্যারাকে নিয়ম ভেঙে থাকতো এবং পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা বলছেন, সঞ্জয় একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হলেও নিয়ম ভেঙে পুলিশ ব্যারাকে অবস্থান করছিল। এমন একটি ঘটনায় উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নজরে আসেনি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় সঞ্জয়ের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের নগরপাল লালবাজারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, “ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, মৃত মহিলা চিকিৎসকের গলার হাড় ভেঙে গিয়েছিল এবং তাঁর দেহে কোনো পোশাক ছিল না। সঞ্জয় দীর্ঘদিন ধরে ওই মহিলা চিকিৎসকের উপর নজর রেখেছিল। ময়নাতদন্তের সময় সহকর্মী চিকিৎসকরা এবং মা-বাবা সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখছি এবং আরো একাধিক ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে।”
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর:
১. সঞ্জয় রায় কিসের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন?
উত্তর: সঞ্জয় রায়কে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২. সঞ্জয় রায়ের পরিবার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?
উত্তর: সঞ্জয় রায়ের পরিবার, বিশেষ করে তাঁর মা এবং দুই বোন, ঘটনার পর শোক ও হতাশায় ভুগছেন এবং ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
৩. সঞ্জয়ের মা তাঁর ছেলের সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর: সঞ্জয়ের মা বলেছেন যে তাঁর ছেলে মেধাবী ছিল এবং এমন কুকীর্তি ঘটাবে তা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
৪. সঞ্জয়ের দুই বোন কেন ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন?
উত্তর: সঞ্জয় রায়ের দুই বোন ভাইয়ের কুকীর্তির কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন এবং তাঁদের মতে, ভাইয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখা যায় না।
৫. সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্ট কখন হয়েছে?
উত্তর: সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্ট শনিবার সিবিআই কর্তৃক সম্পন্ন হয়েছে।
৬. সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবি কেন উঠেছে?
উত্তর: সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবি উঠেছে কারণ তাঁর অভিযোগ গুরুতর এবং অপরাধের নৃশংসতা অনেকেই ফাঁসির মাধ্যমে বিচার চান।
৭. সঞ্জয়ের পরিবারের অবস্থান কী?
উত্তর: সঞ্জয়ের পরিবার, বিশেষ করে তাঁর মা এবং দুই বোন, ভাইয়ের কুকীর্তির কারণে বিপর্যস্ত এবং ফাঁসি হলে ভাইয়ের মরদেহও গ্রহণ করবেন না।
৮. সঞ্জয়ের মানসিক অবস্থা কেমন?
উত্তর: সঞ্জয়ের মানসিক অবস্থা নিয়ে পুলিশ বলছে, সে ধরা পড়ার পরেও বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছে এবং অতীতের রেকর্ডও খারাপ ছিল।
৯. সঞ্জয়ের সাথে পুলিশ কর্মীদের সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর: সঞ্জয় পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল এবং নিয়ম ভেঙে পুলিশ ব্যারাকে অবস্থান করেছিল।
১০. সঞ্জয়ের মায়ের বক্তব্য কী?
উত্তর: সঞ্জয়ের মা বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর ছেলে এমন কাজ করতে পারে এবং তাঁর ছেলে ছোট থেকেই মেধাবী ছিল।