ঘূর্ণিঝড় মেগজাউম একটি  ঘূর্ণিঝড়ের নাম।  মেগজাউম শব্দটি এসেছে বার্মিজ শব্দ থেকে, যার অর্থ ” বড় একটি শক্তিশালী ঈগল“। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর গভীর নিম্নচাপটিকে সর্ব প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রদান করে মিগজাউম ঘূর্ণিঝড় বলে আখ্যায়িত করে, গত ২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ রবিবার সকালে ।

গত ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রথম সূত্রপাত ঘটে । গত ২৯ নভেম্বর ২০২৩ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে গঠিত হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম।

গত ২ ডিসেম্বর লঘুচাপ থেকে এটি একটি নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং ৩ ডিসেম্বর এটি নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিনত হয়। গত ৩ ডিসেম্বর সকালে গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে মিগজাউম ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

ঘূর্ণিঝড় মোখা

২০২৩ সালের প্রথম ঘূর্ণিঝড় মোখাঃ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ১৪ মে স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানে, যার প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও ঝড় হয় এবং প্রতি ঘণ্টায় ১৭৫ মাইল পর্যন্ত বেগে প্রবল বাতাস বয়ে যায়।

ঘূর্ণিঝড় হামন

২০২৩ সালের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় হামনঃ  ২৪ অক্টোবর সোমবার দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় হামন আঘাত হানে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার উপকূলে।  আবহাওয়া অধিদফতর জানায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়। সাইক্লোন হামুন ২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের চতুর্থ নামকৃত ঘূর্ণিঝড় ছিল।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি

২০২৩ সালের তৃতীয় ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: ঘূর্ণিঝড় মিথিলে আঘাত হানে ২০২৩ সালে ১৭ ই নভেম্বর, যা পটুয়াখালীতে সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১০২ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আঘাতে ফলে সারাদেশে মোট সাতজনের মৃত্যু ঘটে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ফলে সারা দেশে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ১৭ নভেম্বর সকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় সাইক্লোন মিধিলি। ২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের পঞ্চম নামকৃত ঘূর্ণিঝড় ছিল।

ঘূর্ণিঝড় মেগজাউম 

২০২৩ সালের চতুর্থ ঘূর্ণিঝড় মেগজাউম: গত ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রথম সূত্রপাত ঘটে । গত ২৯ নভেম্বর ২০২৩ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে গঠিত হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম।

গত ৩ ডিসেম্বর সকালে গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে মিগজাউম ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে?

সহজ ভাবে বলতে গেলে কোন স্থানে যদি হঠাৎ করে বায়ুর ঘাটতি পড়ে তখন ওই স্থানের বায়ুর ঘাটতি পূরণ করার জন্য চার পাশের বায়ু যে চাপ প্রদান করে তাকে ঘূর্ণিঝড়। 

অর্থাৎ কোন স্থানের বায়ু যদি হঠাৎ করে সরে যায় বা উপরে উঠে যায় তখন ওই স্থানটি দখল করার জন্য চারপাশের বায়ু  ঘূর্ণায়মান হয়ে  ওই স্থানটি দখল করে থাকে, তাকে ঘূর্ণিঝড় বলে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এবং ভারতের ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

  • ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘন্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার এর মধ্যে হয় তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
  • ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘন্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার এর মধ্যে হয় তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
  • ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘন্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার এর মধ্যে হয় তাকে হ্যারিকান ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।
  • ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার বা তার থেকে বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নাম তালিকা

বিভিন্ন স্থানের ঝড়ের নামঝড়ের নামের অর্থনামকরণকারী দেশসাল
অনিলবাতাসবাংলাদেশ২০০৪
মুকদা***থাইল্যান্ড২০০৬
আকাশউদারভারত২০০৭
সিডরচোখশ্রীলঙ্কা২০০৭
গণু***মালদ্বীপ২০০৭
নার্গিসফুলপাকিস্তান২০০৮
রেশমিকোমলশ্রীলঙ্কা২০০৮
খাইরুনউত্তমওমান২০০৮
নিশানারীবাংলাদেশ২০০৮
বিজলিবিদ্যুৎভারত২০০৯
আইলাডলফিনমালদ্বীপ২০০৯
ওয়ার্ডফুলওমান২০০৯
মহাসেনসৌন্দর্য্যশ্রীলঙ্কা২০১৩
হুদহুদএকটি পাখির নামওমান২০১৪
কোমেনবিস্ফোরকথাইল্যান্ড২০১৫
রোয়ানুনারকেল ছোবড়ার দড়িমালদ্বীপ২০১৬
নাদাদ্রমূর্তির নারীওমান২০১৬
মোরাসাগরের তারাথাইল্যান্ড২০১৭
তিতলিপ্রজাপতিপাকিস্তান২০১৮
গাজাহাতিশ্রীলঙ্কা২০১৮
ফণীসাপবাংলাদেশ২০১৯
বুলবুলএকটি পাখিপাকিস্তান২০১৯
কিয়ারবাঘমায়ানমার২০১৯
হিক্কাHiccupমালদ্বীপ২০১৯
বায়ুবাতাসভারত২০১৯
মহা***ওমান২০১৯
আম্ফানআকাশথাইল্যান্ড২০২০
নিসর্গপ্রকৃতিবাংলাদেশ২০২০
গতিগতিভারত২০২০
নিভারনিবারণইরান২০২০
বুরেভীব্ল্যাক ম্যানগ্রোভমালদ্বীপ২০২০
টাউকটেসরীসৃপ (গেকো)মায়ানমার২০২১
ইয়াস/যশহতাশাওমান২০২১
জাওয়াদমহান/উদারসৌদি আরব২০২১
অশনিক্রোধশ্রীলঙ্কা২০২২
সিত্রাংপাতাথাইল্যান্ড২০২২
মোকা/মোচাইয়েমেনের একটি বন্দরইয়েমেন২০২৩
বিপর্যয়দুর্যোগবাংলাদেশ২০২৩
তেজশক্তি/বলভারত২০২৩
হামুনহ্রদ বা বড় জলাশয়ইরান২০২৩
মিধিলিবিশাল গাছমালদ্বীপ২০২৩
মিচাংস্থিতিস্থাপকতা বা দৃঢ়তামায়ানমার২০২৩
রেমালবালুওমান২০২৪

 

আরো জানতে পারোঃ

ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কি?

ঘূর্ণিঝড়ে তীব্রতা নির্ভর করে বায়ুর চাপের উপর।  অর্থাৎ বায়ুর শূন্য স্থানটি দখল করার জন্য চারপাশের বায়ু কি পরিমাণ সাথে শূন্য স্থানটি দখল করছে তার ওপর। 

অর্থাৎ চারপাশের বায়ুর চাপ যদি অধিক হয়ে থাকে তাহলে বলা যায় যে ঘূর্ণিঝড়  কেমন তীব্র হবে। শূন্যস্থানটি দখল করার জন্য চারপাশের বায়ু টি যত দ্রুত জায়গাটি দখল করে তত বেশি ঘূর্ণিঝড়ে তীব্রতা হয়।

২০২৩ সালে বাংলাদেশের মোট তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। তিনটি ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের উপকূলে প্রভাব ফেলেছে।