বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে আগামী তিনদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের মতে, এই লঘুচাপ আগামী কিছু দিনের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে এবং দেশের উপকূল অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আপাতত নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার বা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কোন শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বন্যা সতর্কীকরণ দপ্তরের কর্মকর্তারা।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে যা ঘণীভূত হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাস
আজ (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশ কিছু জায়গায়; ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বন্যা পরিস্থিতি এবং নদীর পানি
এদিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গত মাসের ২০ তারিখের পর থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, যা ১১টি জেলার অন্তত অর্ধকোটি মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার সঙ্গে যুক্ত নদ-নদীর পানি সমতল ধীরগতিতে বাড়ছে। গঙ্গা-পদ্মার সঙ্গে যুক্ত নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এসব নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রবাহে থাকতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সিলেট বিভাগের সারিগোয়াইন, মনু ও খোয়াই নদীর পানি সমতলও হ্রাস পাচ্ছে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে।
চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীর পানি সমতল বাড়ছে, অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলের মুহুরি ও গোমতী নদীর পানিসমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
সতর্কীকরণ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।