মানুষ সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অবস্থানে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে চায়। কিন্তু কখনও কখনও, কিছু লোক অপরের বিরুদ্ধে অসত্য কথা বলে, যা মানুষের মানহানি করতে পারে। যখন কেউ অন্যের খ্যাতি ক্ষুণ্ন করে, তখন সেই ব্যক্তি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারে? আইন বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে।
মানহানির আইনি সংজ্ঞা
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের ৪৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ অন্য কোনো ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কথা বা চিহ্ন বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে নিন্দা প্রকাশ করেন, তবে সেটি মানহানি বলে গণ্য হবে। যদি কেউ জানেন বা বিশ্বাস করেন যে, তাদের প্রকাশিত তথ্যের ফলে অন্যের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে, তাও মানহানি হিসেবে বিবেচিত হবে।
মানহানির শাস্তি
যদি কেউ অপরের মানহানি করে, তাহলে তার শাস্তি হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা। তবে, নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, যদি কেউ ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে, তাহলে তাকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। এখানে কারাদণ্ডের বিধান নেই।
মানহানি নয়, এমন কিছু কার্য
কিছু কার্য আছে যেগুলো মানহানি হিসেবে গণ্য হবে না। যেমন:
- যদি সত্যি কথা বলা হয় জনকল্যাণের জন্য।
- সরকারি কর্মচারীর আচরণ নিয়ে মতামত প্রকাশ করা।
- আদালতের কার্যবিবরণী প্রকাশ করা।
- যদি কোনো ব্যক্তি সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ করেন।
মানহানির মামলা কোথায় করবেন?
কোনো ব্যক্তি যদি কারো বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে চান, তাহলে আদালতে যেতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা করতে হলে সাইবার ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। অন্যদিকে, দণ্ডবিধির অধীনে মামলা করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যেতে হবে।
গ্রেপ্তারির বিধান
সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় এবং দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় আমল অযোগ্য মামলা বিবেচিত হয়। এর অর্থ, যদি কেউ এই ধারায় মামলা করতে চান, তাহলে আদালতের অনুমতি ছাড়া পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না।
ট্রাইব্যুনালের জরিমানা
ট্রাইব্যুনাল যে মামলার ক্ষেত্রে জরিমানা করবে, সেটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে। তবে, তারা এর চেয়ে কম বা বেশি জরিমানা করতে পারেন। আদালতের বিবেচনার উপর ভিত্তি করে জরিমানা কত হবে তা নির্ধারণ করা হবে।
জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া
জরিমানা আদায় করার জন্য আদালত বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারে। তারা অপরাধীর সম্পত্তি বিক্রি করে জরিমানা আদায় করতে পারেন, অথবা আদালত কর্তৃক ডিক্রি জারি করে জরিমানা আদায় করতে পারেন।
সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব
আমরা সকলেই জানি, বাক্স্বাধীনতা আমাদের মৌলিক অধিকার। তবে, এর মানে এই নয় যে, আমরা অন্যের সম্মানহানি করতে পারি। আমাদের উচিত সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা।
মানহানি একটি গুরুতর বিষয়, এবং আমাদের উচিত এ ব্যাপারে সচেতন থাকা। আমরা যদি বুঝতে পারি যে, আমাদের কথার ফলে অন্যের সম্মানহানি হতে পারে, তবে আমাদের উচিত চিন্তা করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। আইনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব, তবে আমাদের দায়িত্বও রয়েছে যে, আমরা যেন অন্যের অধিকার লঙ্ঘন না করি।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া