বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে “মুজিববর্ষ” উদযাপন করা হয়েছিল। এই উপলক্ষে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড, অনুষ্ঠান, স্থাপনা এবং মূর্তি তৈরি করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মুজিববর্ষের নামে জনগণের অর্থ অপচয় হয়েছে এবং সেই খরচের একটি বিস্তারিত ডকুমেন্টেশন করা হবে।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, মুজিববর্ষে কোথায় এবং কীভাবে অর্থ অপচয় হয়েছে, কত টাকা খরচ হয়েছে এবং এর পিছনে কি কি কারণ ছিল। আসুন, বিস্তারিতভাবে জানি এই বিষয়ে।

মুজিববর্ষের উদ্দেশ্য এবং উদযাপন

মুজিববর্ষ ছিল বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। পুরো বছরব্যাপী নানা ধরনের অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, মূর্তি, ম্যুরাল এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণ করা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর ত্যাগ ও সংগ্রামকে তুলে ধরা। কিন্তু এসব কর্মকাণ্ডের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

অপচয়ের অভিযোগ

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, মুজিববর্ষ উদযাপন সংক্রান্ত খরচের একটি ডকুমেন্টেশন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, মুজিববর্ষের নামে অনেক টাকা অপচয় হয়েছে। একদিকে যেখানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটময়, সেখানে কতটা দায়িত্বশীলভাবে এই খরচ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, “আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হচ্ছে, অথচ মুজিববর্ষের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে।”

মুজিববর্ষের খরচের দিকগুলো

প্রেস সচিব আরও জানান, মুজিববর্ষের নানা প্রকল্পে খরচের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিশেষভাবে, মুজিববর্ষের নামে বেশ কিছু মূর্তি এবং ম্যুরাল বানানো হয়েছে। এমনকি, কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জোর করে মুজিব বর্ষের কিছু নির্দিষ্ট প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। যেমন, অনেক প্রতিষ্ঠান মুজিব কর্নার স্থাপন করেছে বা বঙ্গবন্ধুর মূর্তি বানাতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে কোন প্রকল্পে কত টাকা খরচ হয়েছে এবং এসব খরচ কতটুকু উপকারে এসেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠছে।

বিশাল পরিমাণ খরচ: ৪ হাজার কোটি টাকা!

একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র মূর্তি তৈরি এবং ম্যুরাল নির্মাণের নামে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এতে ১০ হাজার মূর্তি বানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন খরচের পরিমাণ দেখে অনেকেই বিস্মিত। বিশেষত, যখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চ্যালেঞ্জের মধ্যে, তখন এসব কর্মকাণ্ডে এত বেশি অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন ছিল কি না, তা নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন উঠেছে।

পদ্মা সেতুর ম্যুরাল এবং ১১৭ কোটি টাকার খরচ

শফিকুল আলম পদ্মা সেতুর দুটি ম্যুরালের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “পদ্মা সেতুতে দুটি ম্যুরালের জন্য ১১৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, চিন্তা করা যায়?” এটা প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন দেশের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য অর্থের অভাব দেখা যাচ্ছে।

ডকুমেন্টেশন এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

শফিকুল আলম আরও জানিয়েছেন, ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন হলে পুরো খরচের হিসাব বের করা হবে এবং তা পর্যালোচনা করা হবে। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত যে সকল খরচ হয়েছে, তা কীভাবে ব্যয় হয়েছে এবং কতটা সঠিক ছিল, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।” তিনি বলছেন, “এগুলো জনগণের কর-এর টাকা, তাই সেগুলোর সঠিকভাবে ব্যবহার হওয়া নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।”

সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?

এখন পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তারা মুজিববর্ষের প্রকল্পগুলো তদারকি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে, শফিকুল আলম বলেছেন, “প্রথমে ডকুমেন্টেশন করা হোক, তারপর দেখা যাবে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়।” অর্থাৎ, পুরো পরিস্থিতি যাচাই করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করবে সেই তথ্যের ওপর।

মুজিববর্ষের নামে নানা ধরনের খরচ হলেও, সেই খরচের সঠিক ব্যবহার এবং উদ্দেশ্য ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন সংকটময়, তখন এমন খরচ কতটা উপযুক্ত ছিল, তা নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন উঠছে। আমরা চাই, ভবিষ্যতে দেশের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক, যাতে জনগণের অর্থ অপচয় না হয় এবং প্রকৃত উন্নয়নমূলক কাজগুলো বেশি গুরুত্ব পায়।