বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নতুন ২৩ জন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, নতুন বিচারকদের পরিবারের সদস্য এবং আরও অনেকে।
শপথ অনুষ্ঠানের বিস্তারিত
শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের আদেশক্রমে গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় ২৩ জন বিচারপতিকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন বিচারকদের মেয়াদ হবে শপথ নেওয়ার তারিখ থেকে দুই বছর।
নতুন বিচারপতিদের তালিকা
নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিরা হলেন:
- মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার
- সৈয়দ এনায়েত হোসেন
- মো. মনসুর আলম
- সৈয়দ জাহেদ মনসুর
- কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা
- মো. যাবিদ হোসেন
- মুবিনা আসাফ
- কাজী ওয়ালিউল ইসলাম
- আইনুন নাহার সিদ্দিকা
- মো. আবদুল মান্নান
- তামান্না রহমান
- মো. শফিউল আলম মাহমুদ
- মো. হামিদুর রহমান
- নাসরিন আক্তার
- সাথিকা হোসেন
- সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন
- মো. তৌফিক ইনাম
- ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন
- শেখ তাহসিন আলী
- ফয়েজ আহমেদ
- মো. সগীর হোসেন
- শিকদার মাহমুদুর রাজী
- দেবাশীষ রায় চৌধুরী
পদে নিয়োগের প্রেক্ষাপট
এটি সুপ্রিম কোর্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকারের পতনের পর সবচেয়ে বড় বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৮ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এ ২৩ জনকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এর ফলে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নতুন বিচারপতিরা।
বিচারকদের দায়িত্ব ও আশা
নতুন বিচারপতিরা দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কাজ করবেন। তাদের ওপর জনগণের অনেক আশা আছে। আইনগত জটিলতা দূর করে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় তারা কাজ করবেন। নতুন বিচারপতিরা আশা করেন, তারা সঠিক ও সুবিচার নিশ্চিত করতে পারবেন।
বিচারপতি নিয়োগের প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের জন্য নতুন বিচারপতি নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের বিচার বিভাগে দুর্নীতি এবং দেরি হওয়া মামলাগুলোকে মোকাবিলা করতে নতুন মুখের প্রয়োজন ছিল। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে এই ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা দেশে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
এটি প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই নিয়োগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে নতুন বিচারপতিদের দায়িত্ব হবে জনগণের মধ্যে আইন ও ন্যায়ের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা।
নতুন বিচারপতিরা এসে যে সংকটগুলো মোকাবিলা করবেন, তা হলো—মামলার জট, দ্রুত বিচার, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। তারা নিজেদের ওপর রাখা দায়িত্বকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন, যাতে দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। নতুন বিচারপতিদের কাজ হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং সাধারণ মানুষের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।
শপথ গ্রহণের গুরুত্ব
শপথ গ্রহণ শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি বিচারকদের কাছে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি একটি প্রতিশ্রুতি। শপথের মাধ্যমে নতুন বিচারপতিরা তাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেন। বিচারক হিসেবে তাদের আচরণ, সিদ্ধান্ত এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় তারা কিভাবে কাজ করবেন, তা শপথের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়।
শপথ অনুষ্ঠানে বিচারপতিরা আইন ও দেশের সংবিধানের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জানাতে বাধ্য হন। এটি তাদের মনে একটি শক্তিশালী নৈতিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে। নতুন বিচারপতিদের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণ প্রত্যাশা করে যে তারা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজ করবেন এবং দুর্নীতি বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বিচারক এবং আইনজীবীরা এই প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করেন। এটি একটি দলগত প্রচেষ্টা যেখানে সকলেই একসাথে ন্যায়ের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। শপথের পর বিচারকদের উচিত তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করা।
বিচারকদের মেয়াদ ও কার্যক্রম
নতুন বিচারপতিদের নিয়োগের মেয়াদ হবে শপথ নেওয়ার দিন থেকে দুই বছর। এই সময়কালে তাদের কাজ হবে আইনি বিষয়গুলো দ্রুত এবং সঠিকভাবে বিচার করা। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে মামলার শুনানি, আইনগত পরামর্শ এবং জনগণের সমস্যা সমাধানে সহায়তা।
বিচারকদের কাজের মধ্যে মামলা পরিচালনা করা, আইনগত তথ্য প্রদান করা, এবং মামলার জট কমানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারা যাতে অযথা বিলম্ব না করেন, সেজন্য তাদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা থাকবে। মেয়াদের শেষের দিকে তারা যে উন্নতি করতে পারবেন, তা জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে।
নতুন বিচারপতিরা তাদের কার্যক্রম শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিচার ব্যবস্থা একটি নতুন মাত্রায় প্রবেশ করবে। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের যে উদ্বেগ ছিল, তা কমাতে তাদের সঠিক ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং মানুষের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে।
দেশের বিচার ব্যবস্থায় নতুন মুখ
বিচার ব্যবস্থায় নতুন বিচারপতি নিয়োগের ফলে দেশে আইন ও বিচার ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা-ভাবনা ও উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি আসবে। নতুন বিচারপতিরা তাদের তরুণ চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বিচার ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হবে।
এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন, যা দেশের আইনগত পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়তা করবে। বিচারপতিরা নতুন নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও সুষ্ঠু ও কার্যকর করতে পারেন। তাদের মধ্যে তরুণ বিচারকদের উপস্থিতি দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণে সহায়ক হবে।
নতুন বিচারপতিরা উদ্যমী ও উদ্যোগী হয়ে আইন ও বিচার ক্ষেত্রে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করবেন। তারা তাদের নতুন চিন্তাধারার মাধ্যমে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও সুবিচার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকবেন। দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় নতুন বিচারকদের ভূমিকা অপরিসীম।
জনগণের প্রত্যাশা ও দায়িত্ব
নতুন বিচারপতিদের প্রতি জনগণের অনেক আশা ও প্রত্যাশা রয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ চাইছেন যে নতুন বিচারপতিরা ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাদের পক্ষে দাঁড়াবেন এবং আইনের শাসনকে সুসংহত করবেন। জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগ নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা দূর করার দায়িত্ব নতুন বিচারকদের।
বিচারপতি হিসেবে তাদের কাজ হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখা এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া। তারা যেন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে না গিয়ে আইনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করেন, সেটাই হবে তাদের মূল লক্ষ্য।
জনগণের আশা, নতুন বিচারপতিরা তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করে, দেশের বিচার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবেন। এতে করে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং সবার মধ্যে ন্যায়বিচারের অনুভূতি শক্তিশালী হবে। নতুন বিচারপতিরা তাদের দায়িত্ব পালন করে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন, যা দেশের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া