বর্তমান বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা এখনো কাটছে না। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে, কিন্তু এর সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। বিশেষ করে, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম কমাতে সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। এক দিকে কোনো পণ্যের দাম কমছে, অন্য দিকে অন্যটির দাম বাড়ছে। এর ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ এখনও কষ্টে আছেন।

আজকের বাজার দর

সম্প্রতি রপ্তানি শুল্ক কমানোর পরও পেঁয়াজ ও চিনির দাম বেড়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের দামও মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। চিনির দামও বেড়েছে, প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পায়নি, তবে কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৫ টাকা বেড়েছে।

পণ্যদাম (কেজি/লিটার)
পেঁয়াজ১৩০ – ১৪০ টাকা
আমদানি করা পেঁয়াজ১১০ – ১২০ টাকা
চিনি১০০ + টাকা
মোটা চাল+২ টাকা
চিকন চাল+১ টাকা
খোলা সয়াবিন তেল+৫ টাকা (লিটার)
বোতলজাত সয়াবিন তেলএকই দাম
সবজিভিন্ন ভিন্ন দাম
কাঁচামরিচভিন্ন ভিন্ন দাম
ডিমকিছুটা কম দাম

এদিকে, চালের দামও বাড়ছে। মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে মোটা চাল কেজিতে ২ টাকা এবং চিকন চাল ১ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও কিছু সবজি ও কাঁচামরিচের দাম কমেছে, তবে তা এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসেনি। তবে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে।

ক্রেতারা বলছেন, কিছু পণ্যের দাম আগের তুলনায় কমেছে, কিন্তু বাজারের এই অবস্থায় তারা অসন্তুষ্ট। একজন ক্রেতা বলেন, “এক পণ্যের দাম কমে অন্যটির বাড়ছে। এটা খুবই অস্বাভাবিক।” সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে এই সমস্যা সমাধান হবে না।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “শুল্ক কমানোর সুফল যেন মাঠ পর্যায়ে যায়, সেটার নিশ্চিত করতে হবে।” এর পাশাপাশি, পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালে আনতে এখনই একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক মুনাফা রোধে সরকারকে সার্বক্ষণিক সক্রিয় থাকতে হবে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

বাজারে অস্থিরতা কাটানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে। আমাদের নিজেদের মধ্যে সংহতি গড়ে তুলতে হবে এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। যাতে আমরা সব সময় সঠিক মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে পারি এবং বাজারের ওপর চাপ কমাতে পারি।

বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে, সরকার এবং জনগণ উভয়কেই একসাথে কাজ করতে হবে। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের ওপর নজর রাখা এবং যারা মূল্যবৃদ্ধি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি, আমাদেরও সচেতন হতে হবে এবং বাজারের চাহিদার কথা মনে রেখে পণ্য ক্রয় করতে হবে।

এখন সময় এসেছে, সরকারকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, যেন জনগণের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা মেটানো যায়। আমাদের এই বাজার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য সবাইকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তখনই আমরা দেখতে পাব, নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং আমাদের জীবনে সুখ এবং শান্তি ফিরে আসবে