এই বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তাঁরা হলেন ড্যারন আসেমোগলু, সাইমন জনসন এবং জেমস এ রবিনসন। এরা সবাই মিলে সমাজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁদের কাজের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, কেন কিছু দেশ অন্য দেশের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ এবং কেন কিছু দেশ পিছিয়ে থাকে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স তাঁদের নাম ঘোষণা করে। নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তাঁরা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য নিয়ে নতুন ধারণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আসেমোগলু, জনসন ও রবিনসনের গবেষণা দেখিয়েছে, ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা বিভিন্ন দেশে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, সেগুলোতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল কিনা, তার উপর নির্ভর করে দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা। যদি কোনো দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, তাহলে সেই দেশের মানুষ দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হয়। কিন্তু যদি শোষণমূলক ব্যবস্থা হয়, তাহলে কেবল কয়েকজন ব্যক্তি লাভবান হয় এবং অন্যদের ক্ষতি হয়।
গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন ক্লাউডিয়া গোলডিন। তিনি শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে গবেষণা করেছেন। গত ৫৩ বছরে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ৯৩ জন, এর মধ্যে মাত্র তিনজন নারী। তাঁদের মধ্যে ক্লাউডিয়া গোলডিন ছাড়া অন্য দুইজন হলেন এলিনর অস্ট্রোম এবং এস্তার দুফলো। এই সংখ্যাটা আমাদের সমাজে নারীদের প্রতিনিধিত্বের অভাবের দিকে ইঙ্গিত করে।
এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে জাপানের একটি সংগঠন, যা পরমাণু বোমার শিকার মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে। এই সংগঠনটির নাম নিহন হিদাঙ্কিও। এটি যুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমার শিকার মানুষদের নিয়ে গঠিত হয়েছে। শান্তিতে নোবেল পাওয়া এই সংগঠনের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পরমাণু অস্ত্রবিরোধী আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখছে।
এছাড়া, চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং, যিনি মানবজীবনের জটিলতাগুলো তুলে ধরেছেন। রসায়নে তিন বিজ্ঞানী প্রোটিনের গবেষণার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। পদার্থবিদ্যায় কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের ওপর কাজ করার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন জিওফ্রে হিনটন এবং জন হপফিল্ড।
আমাদের এই তথ্যগুলো জানার পর, বুঝতে পারি যে একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেক কিছু নির্ভর করে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ওপর। যে দেশে ইনক্লুসিভ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হয়। আর যেখানে শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, সেখানে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে যায়।
ড্যারন আসেমোগলু এবং জেমস রবিনসন তাঁদের বিখ্যাত বই “হোয়াই নেশনস ফেইল” লেখার মাধ্যমে এই ধারণা উপস্থাপন করেছেন। এই বইয়ে তাঁরা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পার্থক্য কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে। যখন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ থাকে, তখন দেশগুলো উন্নতির দিকে এগোয়।
নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করার সময় আসেমোগলু বলেন, এটি একটি অপ্রত্যাশিত এবং আনন্দের সংবাদ। পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে তাঁদের গবেষণার গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এবারের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার অর্থমূল্য নিয়ে এসেছে, যা তিনজন বিজয়ীর মধ্যে ভাগ করা হবে। এটি আমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
এখন আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী দিনে এই গবেষণাগুলি আমাদের সমাজে আরও পরিবর্তন আনবে এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এই বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার আমাদের শেখায়, যে দেশগুলোর সামাজিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী, সেসব দেশ দ্রুত উন্নতি করে। আমাদেরও এই শিক্ষাগুলো মেনে চলা উচিত, যাতে আমরা আমাদের দেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারি।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম