বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করার প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও কার্যকর হয়ে উঠেছে। ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যাতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এর মাধ্যমে আয়কর পরিশোধের খরচ অনেক কমে গেছে। এর ফলে, করদাতারা এখন আগের চেয়ে কম খরচে সহজে তাদের আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন।
কী পরিবর্তন এসেছে আয়কর পরিশোধে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় জানানো হয়েছে যে, এখন থেকে এমএফএস এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আয়কর পরিশোধে চার্জের পরিমাণ অনেক কমানো হয়েছে। আগে যেখানে মোবাইল ওয়ালেট বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আয়কর পরিশোধে অনেক বেশি চার্জ দিতে হতো, সেখানে এখন থেকে মাত্র ২০ টাকা (ভ্যাটসহ) লেনদেন প্রতি আদায় করা হবে। ২৫ হাজার টাকা বা তার বেশি লেনদেনে চার্জের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০ টাকা হবে।
এছাড়া, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (যেমন বিকাশ, নগদ বা রকেট) এর মাধ্যমে যদি আয়কর পরিশোধ করা হয়, তবে সেখানে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ বা ৩০ টাকা চার্জ দিতে হবে। এই সব সেবার মাধ্যমে আয়কর পরিশোধের জন্য কোনো অতিরিক্ত ফি লাগবে না, অর্থাৎ কোনো অতিরিক্ত খরচ হবে না।
নতুন নিয়মের সুবিধা কী?
এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করেছে যে, এই নতুন চার্জ কাঠামো অনলাইনে আয়কর পরিশোধের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলবে। বিশেষত, ই-রিটার্ন দাখিলকারী করদাতারা এখন সহজেই এবং কম খরচে তাদের কর পরিশোধ করতে পারবেন। এতে অনলাইনে কর পরিশোধের প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং সরকারকে কর সংগ্রহ করতে সুবিধা হবে।
কারণ, আগের ফি কাঠামোতে অনেকেই বেশি চার্জের কারণে অনলাইনে কর পরিশোধ করতে চাইতেন না। এই পরিবর্তনটি করদাতাদের মধ্যে সহজে আয়কর পরিশোধের চাহিদা বাড়াবে। এর ফলে, কর পরিশোধের হার বৃদ্ধি পাবে এবং আয়কর দাখিল প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও নির্ভুল হবে।
কেন প্রয়োজন ছিল এই পরিবর্তন?
আগে, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে প্রতি লেনদেনে প্রায় ১.৬% চার্জ কাটা হতো। এর ফলে অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইতেন না। এতে, দেশের কর সংগ্রহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছিল। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে এই চার্জ কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, এমএফএস সেবার মাধ্যমে কর পরিশোধ করার ক্ষেত্রে আগে বিভিন্ন ফি গ্রহণ করা হতো, যা করদাতাদের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল। এখন, সেই ফি কাঠামোতে পরিবর্তন এনে, সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে, ২০২৪-২৫ করবর্ষে থেকে এই নতুন চার্জ কাঠামো কার্যকর হবে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেনের জন্য সর্বোচ্চ ২০ টাকা (ভ্যাটসহ) ফি নেয়া হবে এবং ২৫ হাজার টাকার বেশি লেনদেনে এই চার্জ বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ওয়ালেট ব্যবহার করে কর পরিশোধে এখন ১ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা ফি নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা বলেছেন, “আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি যাতে গ্রাহকদের খরচ কমানো যায় এবং তাদের জন্য কর পরিশোধের প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।”
নতুন ফি কাঠামো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই নতুন নির্দেশনা শুধু গ্রাহকদের জন্য সুবিধাজনক নয়, বরং দেশের অর্থনীতি এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। অনলাইনে আয়কর পরিশোধের মাধ্যমে করদাতাদের জন্য সময় এবং খরচ দুটোই কমবে। এটা সরকারকে আরও বেশি কর সংগ্রহ করতে সাহায্য করবে, যা দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এনবিআরের ভূমিকা
এনবিআর করদাতাদের কাছে অনলাইন আয়কর পরিশোধ আরও সহজ করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ই-রিটার্ন সিস্টেম, যার মাধ্যমে করদাতারা সহজে আয়কর পরিশোধ করতে পারেন। এই সিস্টেমটি ২০২৪-২৫ করবর্ষে পূর্ণ উদ্যোগে কার্যকর হয়েছে।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম যে, অনলাইনে আয়কর পরিশোধের খরচ কমিয়ে এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সুবিধাজনক করা যায়, যাতে করদাতারা স্বাচ্ছন্দ্যে এই সেবা গ্রহণ করেন।”
সামগ্রিকভাবে নতুন নিয়মের উপকারিতা
১. কম খরচে আয়কর পরিশোধ
২. অনলাইনে কর পরিশোধের প্রবণতা বৃদ্ধি
৩. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ানো
৪. সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি
এখন থেকে আপনি খুব সহজেই, কম খরচে আপনার আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন। আগের তুলনায় যেকোনো ধরনের অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারে খরচ কম হওয়ায় এটি সকলের জন্য উপকারী।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম