পাকিস্তান ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২২ বছর পর একটি ওয়ানডে সিরিজ জিতল। এই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি ছিল যেন একটি অলিখিত ফাইনাল, যেখানে পাকিস্তান ৮ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয়। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান খুব কাছাকাছি গিয়েও জয় পায়নি, কিন্তু পরের ম্যাচে তারা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনে। এরপর, তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস তৈরি করে পাকিস্তান।
সিরিজের প্রথম ম্যাচের ফলাফল
সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান জয় পেতে পারছিল, তবে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং অস্ট্রেলিয়ার দক্ষতা তাদের ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছিল। তবে, পরের ম্যাচে পাকিস্তান দলের সদস্যরা নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করলেন। মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং তার দল সিরিজে সমতা ফিরিয়ে এনে সবকিছুকে নতুনভাবে শুরু করেন। প্রথম ম্যাচে হারের পর, তাদের আত্মবিশ্বাস একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
পাকিস্তানের দুর্দান্ত জয়
অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে পাকিস্তান তাদের জয় নিশ্চিত করে। ম্যাচটি ছিল একটি অলিখিত ফাইনাল, কারণ প্রথম দুটি ম্যাচে জয়-পরাজয়ের খেলায় সিরিজ নির্ধারণের জন্য তৃতীয় ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তান তাদের ২২ বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জিতল। এর আগের বার তারা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিতেছিল ২০০২ সালে। এরপর গত দুই দশকে তাদের আর কোনো সিরিজ জয় ছিল না। কিন্তু এবার তারা অস্ট্রেলিয়াকে ২২ বছর পর পরাজিত করে ইতিহাস গড়ে।
দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের দাপট
পাকিস্তান দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে দাপট দেখায়। প্রথমে বল করতে নেমে হারিস রউফ ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১৬৩ রানে গুটিয়ে দেন। এরপর পাকিস্তান দল ১৪১ বল হাতে রেখে সহজেই লক্ষ্যটি তাড়া করে। ওপেনাররা, সাইম আইয়ুব ও আবদুল্লাহ শফিক, পাকিস্তানের জয়ের পথ তৈরি করে দেন।
সাইম আইয়ুব মাত্র ৫২ বলেই ফিফটি তুলে নেন এবং ৮২ রানে আউট হন। এরপর বাবর আজম এবং শফিক মিলে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন। শফিক অপরাজিত থাকেন ৬৪ রানে এবং বাবর আজম ম্যাচটি শেষ করার জন্য একটি ছক্কা হাঁকান। পাকিস্তান ৯ উইকেটে বড় জয় নিয়ে সিরিজে সমতা ফিরে পায়।
২২ বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তানের জয়
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের শেষ ওয়ানডে জয় ছিল ১৯৯৬ সালে। এর পরবর্তী ২২ বছর তারা অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে সিরিজে জয় পায়নি। এবার তারা হারিস রউফ এর দুর্দান্ত বোলিং এবং দলের ভালো পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল।
হারিস রউফের একান্ত পরিশ্রমে, তিনি মাত্র ২৯ রান খরচে পাঁচ উইকেট তুলে নেন। পাকিস্তান দলের বাকি পেসাররা, শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, এবং মোহাম্মদ হাসনাইন একযোগে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের টপকে যান। আফ্রিদি তিনটি উইকেট নেন, আর নাসিম শাহ ও হাসনাইন একজন করে উইকেট নেন।
পাকিস্তানের সংগ্রাম ও জয়
পাকিস্তানের বোলিং বিভাগ তাদের সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম ম্যাচে হারের পর, দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান তাদের শক্তি প্রমাণ করে এবং তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে।
অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তানের এটি দ্বিতীয় জয় এবং সর্বশেষ ৩০ ওয়ানডে ম্যাচে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। পাকিস্তান দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান এই সিরিজে তার নেতৃত্বের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তিনি উইকেটকিপিং গ্লাভস হাতে ছয়টি ক্যাচ নেন, যা ওয়ানডে ক্রিকেটে একটি রেকর্ড।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতা
অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ ওভারে মাত্র ১৬৩ রান করতে সক্ষম হয়। তাদের সবচেয়ে ভালো রানকারী ব্যাটসম্যান ছিলেন স্টিভ স্মিথ, যিনি ৩৫ রান করেন। তাদের আর কোনো ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। পাকিস্তানের পেসাররা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের একের পর এক আউট করতে থাকেন এবং অস্ট্রেলিয়া একপ্রকার ধসে পড়ে।
শেষ পর্যন্ত, পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয় তুলে নেয় এবং ২২ বছরের পর পাকিস্তানিদের জন্য একটি স্মরণীয় জয় হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখায়। সিরিজের শেষ ম্যাচটি পাকিস্তানের জন্য ছিল একটি অলিখিত ফাইনাল, যেখানে তারা ৮ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জাকির হাসান