NSO Group-এর তৈরি পেগাসাস সফটওয়্যারটি সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী স্পাইওয়্যার, যা যে কোনো ফোনে গোপনে প্রবেশ করে, সেই ফোন ২৪ ঘণ্টার জন্য নজরদারিতে রাখতে পারে।
জিরো ক্লিক টেকনোলজি, টার্গেট ফোন বা ব্যবহারকারী কখনো জানতেই পারবে না। যে তার ফোন স্পাইওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত।
এখন প্রশ্ন শেখ হাসিনা, বা বাংলাদেশের অন্য কেউ যদি এই সফটওয়ারটি কিনে থাকে, বা কেনে তাহলে, বাংলাদেশে কতগুলো ফোন, ও ল্যাপটপে, বা পিসিতে এটি ছড়াতে পারবে বা ছড়িয়েছে। আর এর দাম কত?, এটি কত সময় ব্যবহার করতে পারবে।
স্পাইওয়্যার এর ব্যবহার:
স্পাইওয়্যার সাধারণত ফিশিং মেসেজ বা ইমেইলের মাধ্যমে প্রবেশ করে। ব্যবহারকারী যখন একটি সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করেন, তখন স্পাইওয়্যার তাদের ডিভাইসে ইনস্টল হয়ে যায়।
অনেক সময় স্পাইওয়্যার ম্যালিশিয়াস অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে প্রদর্শিত হয়। ব্যবহারকারী যখন একটি অ্যাপ ইনস্টল করেন, তখন এটি গোপনে স্পাইওয়্যার ইনস্টল করে ফেলে।
কিছু স্পাইওয়্যার জিরো-ক্লিক আক্রমণের মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে ব্যবহারকারীর কোন কার্যক্রমের প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, একটি হোয়াটসঅ্যাপ কল করা হলে, কলটি রিসিভ না করেও স্পাইওয়্যার ইনস্টল হতে পারে।
স্পাইওয়্যার প্রায়ই সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রতারক ব্যবহারকারীকে বিশ্বাস করে এমন কিছু দাবি করে এবং তাদের তথ্য চুরি করে।
কখনও কখনও, স্পাইওয়্যার সরাসরি টার্গেটের ডিভাইসে প্রবেশ করার জন্য শারীরিকভাবে তাদের ডিভাইসে প্রবেশ করা হয়। যেমন, একজন এজেন্ট যদি টার্গেটের ফোন চুরি করে বা হাতে পায়, তখন তারা স্পাইওয়্যার ইনস্টল করতে পারে।
স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে দুর্বল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটি সাধারণত পাবলিক ওয়াই-ফাই বা নিরাপত্তাহীন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।
কখনও কখনও, স্পাইওয়্যার অন্য ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে প্রবেশ করে। যখন একটি ডিভাইস ম্যালওয়্যারের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন স্পাইওয়্যার গোপনে ইনস্টল হয়ে যায়।
এটি আপনার পাঠানো এবং প্রাপ্ত বার্তা কপি করতে পারে, আপনার ফটো সংগ্রহ করতে পারে এবং আপনার ফোনের কল রেকর্ড করতে পারে। এটি গোপনে আপনার ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে ভিডিও ধারণ করতে পারে, অথবা মাইক্রোফোন চালু করে আপনার কথোপকথন রেকর্ড করতে পারে। সফটওয়্যারটি আপনার অবস্থানও নির্ধারণ করতে পারে।
স্পাইওয়্যার এর দাম
প্রথমে, পেগাসাস ব্যবহারের খরচ বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন টার্গেট ফোনের সংখ্যা, নজরদারির সময়কাল এবং NSO গ্রুপের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রকার। দ্য গার্ডিয়ানের একটি অনুমানের অনুযায়ী, যা ২০১৬ সালের NSO গ্রুপের অভ্যন্তরীণ নথির ওপর ভিত্তি করে, ৫০টি স্মার্টফোন নজরদারির লাইসেন্সের জন্য বছরে ২০.৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ হত।
তদুপরি, ১০০টি স্মার্টফোনের জন্য লাইসেন্সের খরচ ছিল বছরে ৪১.৪ মিলিয়ন ইউরো। ২০১৬ সাল থেকে এই দামগুলি পরিবর্তিত হয়েছে কি না বা NSO গ্রুপ কিছু ক্লায়েন্টকে ডিসকাউন্ট বা রিবেট দিয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
এরপর, দেশের ভিত্তিতে পেগাসাসের আনুমানিক খরচ টার্গেট ফোনের সংখ্যা এবং কার্যক্রমের সময়কাল থেকে নির্ধারণ করা হয়, দ্য গার্ডিয়ানের দেওয়া গড় খরচ ব্যবহার করে। এই তথ্যগুলি আনুমানিক এবং উৎসের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব প্রায় ১৫,০০০ নম্বর পেগাসাসের মাধ্যমে টার্গেট করেছে, লে মঁদ অনুসারে, কিন্তু দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ১০,০০০ সংখ্যার কথা বলছে। একইভাবে, লে মঁদ জানায় যে মরক্কো ২০১৭ সালে পেগাসাস ব্যবহার শুরু করে, যখন সিটিজেন ল্যাব দাবি করে যে এটি ২০১৬ সালে শুরু হয়েছিল।
দেশ | টার্গেট ফোনের সংখ্যা | কার্যক্রমের সময়কাল (বছর) | আনুমানিক খরচ (লক্ষ টাকায়) |
---|---|---|---|
স্পেন | ৬০ | ৬ | ৩২,০০২ |
সৌদি আরব | ১০,০০০ | ৫ | ২৬,৯১০,০০০ |
আজারবাইজান | ৫,০০০ | ৪ | ১,০৭,৬৪০,০০০ |
বাহরাইন | ৩,০০০ | ৩ | ৪৮,৩৩৮,০০০ |
কাজাখস্তান | ১,৫০০ | ২ | ১৬,৯৩৪,০০০ |
মেক্সিকো | ১৫,০০০ | ২ | ১,৬১৯,৪৮০,০০০ |
মরক্কো | ১০,০০০ | ৫ | ২৬,৯১০,০০০ |
রুয়ান্ডা | ৩,৫০০ | ৪ | ৭৫,৮৪৮,০০০ |
হাঙ্গেরি | ৩০০ | ৪ | ৬,৪৭৪,০০০ |
ভারত | ১,০০০ | ৩ | ১৬,৯৩৪,০০০ |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | ১০,০০০ | ৫ | ২৬,৯১০,০০০ |
বাংলাদেশের কোনো তথ্য এখনোও প্রকাশ হয়নি।
অবশেষে, এই দশটি দেশের জন্য পেগাসাসের মোট আনুমানিক খরচ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ১৩,৬৫,৩০০,০০০ টাকার সমান হবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া