ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, যিনি পীর সাহেব চরমোনাই নামেই পরিচিত, সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি।” দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে, যা দেশের জনগণের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনা
পীর সাহেব চরমোনাই উল্লেখ করেন যে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে সহিংসতার নিন্দনীয় ঘটনা। তিনি বলেন, “মানুষ পিটিয়ে হত্যা মেনে নেওয়া যায় না।” এসব ঘটনা আমাদের দেশের সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলছে।
এছাড়া, খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য তিন জেলায় তথাকথিত আদিবাসী কর্তৃক বাঙালি মুসলিম যুবকের নির্মম হত্যা এবং টাঙ্গাইল ও ফরিদপুরে নির্মাণাধীন প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাগুলোও এই রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলাফল বলে তিনি মনে করেন।
জাতীয় মসজিদে উত্তপ্ত পরিস্থিতি
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এসব মোকাবেলা করতে হবে।”
সম্মেলনের আলোচনাসভা
গত শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর রামপুরাস্থ একটি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পীর সাহেব চরমোনাই। এ সম্মেলনে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, যারা দলের কার্যক্রম ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিনের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, এবং বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
দলের সংগঠন ও কার্যক্রম
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম জানান, “দলকে তৃণমূল পর্যায়ে ঢেলে সাজাতে জেলা সভাপতি ও সেক্রেটারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।” তিনি জানান, দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে আসতে দাওয়াতী তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং ইসলামী মন মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দলে যুক্ত করতে হবে।
এছাড়া, তিনি সমমনা ইসলামী দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং রাজনীতিতে একটি আদর্শিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে পারস্পারিক বিরোধীতা কমিয়ে আনতে হবে।”
দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সঙ্কট
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “ঘুরে ফিরে যেন দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতায় না আসতে পারে, এ ব্যাপারে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণজাগরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সর্বসম্মতিক্রমে সমাধানের আহ্বান
একমত হয়ে নেতৃবৃন্দ এই সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন সংকট মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা মনে করেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া দেশের অস্থিতিশীলতা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
শেষ কথা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশের জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সচেষ্ট থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা দেশপ্রেমিক সকল সংগঠন ও নেতাদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করার কথা ঘোষণা করেছেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের এই অবস্থান শুধু দলের মধ্যে নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। তাদের আহ্বান ও পদক্ষেপ দেশের শান্তি ও সুরক্ষার জন্য একটি আশাবাদী দিক।