প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছেন। এ কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি জানাতে আগামী শনিবার থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন তিনি। তবে, কমিশনের সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হবে না; সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নাম ঠিক করা হবে।
সংলাপের মাধ্যমে সরকার রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয় এবং তাদের মতামত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংলাপের সময় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অন্যান্য দলগুলো এখনও আমন্ত্রণ পায়নি।
রাজনৈতিক দলের উদ্বেগ
বিএনপি ও জামায়াত, উভয়ই সরকারের এই সংলাপ নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট। তারা মনে করেন, কমিশনের প্রধান এবং সদস্য নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি। বিএনপির নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়া এই সংলাপ সফল হবে না। তারা চান, কমিশনের কাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের মতামতও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হোক।
বিএনপি জানিয়েছে, তারা সংলাপে অংশ নেবে এবং তাদের মতামত তুলে ধরবে। জামায়াতও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অংশ নেবে।
কমিশন গঠন এবং কাজের অগ্রগতি
১১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হবে। ১ অক্টোবর থেকে এই কমিশনগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে তা সম্ভব হয়নি।
শফিকুল আলম জানান, কমিশনগুলোর প্রধানরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন এবং তাদের জন্য অফিস খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, “কমিশনের সদস্যদের সম্মতি নেওয়া হচ্ছে এবং আশা করছি, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ হবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্দেশ্য
প্রধান উপদেষ্টা চান যে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সংলাপের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হবে। সরকারের ভাষ্যমতে, তারা আশা করছে, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত দিয়ে কমিশনের কার্যক্রমকে আরও উন্নত করবেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হলে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজগুলো আরও দ্রুত হবে। তাঁরা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি।”
জনগণের প্রত্যাশা
দেশের মানুষ মনে করছেন, সরকারের এই উদ্যোগ জনগণের স্বার্থে হবে। তারা চান, সকল দলের মতামত গ্রহণ করে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হোক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের উচিত দ্রুত সংলাপ শেষ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
সংলাপের প্রক্রিয়া
এবারের সংলাপে বিএনপির একটি ছোট দল অংশ নেবে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিবে এবং সরকারের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরবে। জামায়াতও তাদের দলের মতামত নিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণ করবে।
রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, এই সংলাপের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হবে এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পথে এগিয়ে যাবে। তারা আশা করছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
সমাপনী মন্তব্য
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের এই সংলাপ দেশের ভবিষ্যৎকে সুদৃঢ় করতে সাহায্য করবে। সকল দলের মতামত শুনে একটি উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এই উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছে এবং তারা আশা করছে, রাষ্ট্রীয় সংস্কার কার্যক্রমে সকলের মতামত গুরুত্ব পাবে।