রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে পুরোপুরি ভেসে গেছে। দ্বিতীয় দিন মাঠে খেলা শুরু হলেও, পাকিস্তান দলের ব্যাটিংয়ের বিপরীতে মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন বোলিং দারুণ কার্যকরী হয়েছে। মিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তান ২৭৪ রানে অলআউট হয়ে যায়, আর মিরাজ একাই পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন।
বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনের খেলাটি ভেসে যাওয়ার পর, দ্বিতীয় দিনে টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরুতেই তাসকিন আহমেদ পাকিস্তানের ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে প্রথম ওভারেই বোল্ড করে বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য এনে দেন।
পাকিস্তান দলের উদ্বোধনী জুটি শান মাসুদ এবং সাইম আইয়ুব তাদের ইনিংস শুরু করেন দুর্দান্তভাবে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ২৫ ওভারে ১ উইকেটে ৯৯ রান তুলে পাকিস্তান। বিরতির পর বাংলাদেশের বোলিংয়ে পরিবর্তন আসে। মেহেদী হাসান মিরাজ ৫৭ রানে এলবিডব্লিউ করে পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদকে ফেরান।
মিরাজ এরপর সাইম আইয়ুবকে ১১০ বল খেলে ৫৮ রান করার পর স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন। অন্যদিকে, বাবর আজম ৩১ রান, সৌদ শাকিল ১৬, রিজওয়ান ২৯ এবং সালমান আগা ৫৪ রান করেন। তবে, বাকিরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২১ রানে ৪ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ এই ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে দারুণ চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। তাসকিন আহমেদও তিনটি উইকেট নিয়েছেন। দিন শেষে বাংলাদেশ দুই ওভার ব্যাট করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০ রান সংগ্রহ করেছে। সাদমান ইসলাম ৬ রানে অপরাজিত আছেন, আর জাকির হাসান ৩ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি।
ম্যাচের প্রথম দিনে বৃষ্টির কারণে খেলাটি শুরু হতে দেরি হলেও, দ্বিতীয় দিনে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের বোলাররা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন। তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভার থেকেই পাকিস্তানকে চাপে ফেলা শুরু করেন। শরীফুল ইসলামের কুঁচকির চোটের কারণে এক বছর পর টেস্ট খেলতে নামা তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভারেই দেখিয়েছেন তার দক্ষতা।
প্রথম সেশনটি বাংলাদেশের দখলে ছিল না, তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ে পরিবর্তন আসে। মেহেদী হাসান মিরাজ শুরুতেই পাকিস্তান অধিনায়কের প্যাডে আঘাত করে তার ইনিংস শেষ করেন।
মিরাজের পাঁচ উইকেটের মধ্যে দুটি ক্যাচে, দুটি স্ট্যাম্পিংয়ে এবং একটি এলবিডব্লিউয়ে আউট করেছেন ব্যাটসম্যানদের। দ্বিতীয় সেশনে পাকিস্তানকে দ্রুত আলগা করায় এবং তৃতীয় সেশনে নতুন বলেও চাপ বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেশনে তেমন কোনো উইকেট না পড়লেও, দ্বিতীয় সেশন থেকে শুরু করে মিরাজের বোলিংয়ে ম্যাচের চিত্র পরিবর্তন হয়। তার অসাধারণ বোলিংয়ের ফলে পাকিস্তান বড় স্কোর গড়তে পারেনি।
মিরাজের ৫ উইকেটের পারফরম্যান্স ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশেষ স্থান লাভ করেছে। তিনি বিদেশে ১০ বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। আর তাসকিন আহমেদও তার এক বছরের বেশি সময় পর টেস্ট খেলতে গিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। নাহিদ রানা, তার গতির সঙ্গে বাউন্স এবং আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন।
দিনের শেষে বাংলাদেশের বোলিংয়ে কিছু কঠিন ক্যাচ পড়েছে, তবে সেগুলো ঠিকঠাক করলে পাকিস্তানের স্কোর আরও কম হতে পারত। ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিকুর রহিম, যা বাংলাদেশের জন্য একটি অস্বস্তির খবর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
- পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৮৫.১ ওভারে ২৭৪ (শাফিক ০, সাইম ৫৮, মাসুদ ৫৭, বাবর ৩১, শাকিল ১৬, রিজওয়ান ২৯, সালমান ৫৪, শাহজাদ ১২, আলি ২, আবরার ৯, হামজা ০*; তাসকিন ১৭-২-৫৭-৩, হাসান ১৪-১-৬০-০, নাহিদ ১৫-১-৫৮-১, মিরাজ ২২.১-২-৬১-৫, সাকিব ১৭-৩-৩৪-১)।
- বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২ ওভারে ১০/০