আমাদের জীবনযাত্রায় অর্থের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় আমাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ঋণ নিতে হয়। তবে ঋণ নেওয়ার পর তা সঠিক সময়ে পরিশোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ঋণ আমাদের জীবনকে জটিল করে ফেলতে পারে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম; যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।” তাই ঋণ পরিশোধ করা আমাদের সকলের জন্য একটি দায়িত্ব।
তবে, কখনো কখনো আমাদের আর্থিক অবস্থা এমন হয় যে ঋণ পরিশোধ করতে পারি না। এ সময় আমাদের আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। কারণ, আল্লাহই আমাদের প্রতিটি সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। এখানে আমরা কিছু বিশেষ দোয়া উল্লেখ করছি, যা ঋণ পরিশোধে আমাদের সাহায্য করতে পারে।
ঋণ পরিশোধের জন্য দোয়া
প্রথম দোয়া
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আপনার হালালের মাধ্যমে আমাকে পরিতুষ্ট করে হারাম থেকে বিরত রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহের মাধ্যমে আপনি ছাড়া অন্য সবার থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করুন।
এই দোয়াটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা যেন হারামের দিকে না যাই এবং আল্লাহর হালাল রিজিকের প্রতি সন্তুষ্ট থাকি।
দ্বিতীয় দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজ্জি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন দালাইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, এবং অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
এই দোয়াটি আমাদের হৃদয়ে শান্তি দেয় এবং আল্লাহর কাছে আমাদের দুর্বলতার কথা তুলে ধরে।
ঋণ পরিশোধের সময় দোয়া করা
যখন আমরা ঋণ পরিশোধের জন্য চেষ্টা করি, তখন নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, “যদি তোমার উপর সীর পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে, আল্লাহ তা তোমার পক্ষ থেকে শোধ করবেন।” এই বিশ্বাস আমাদের সাহস যোগায়।
এছাড়া, ঋণ পরিশোধের সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। ঋণ পরিশোধ না করার কারণে যে ক্ষতি হয়, তা থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া
নামাজ একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আমরা যখন দুই সেজদার মাঝে দোয়া করি, তখন তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। মহানবী (সা.) বলেন, “নামাজের মাঝে দোয়া করলে তা কবুল হয়।” তাই আমরা যখন নামাজে থাকি, তখন ঋণ থেকে মুক্তির জন্য এই দোয়া নিয়মিত পড়তে পারি।
ঋণের বোঝা ও তার প্রভাব
ঋণের বোঝা মানুষের উপর অনেক চাপ ফেলে। এটা আমাদের মনে দুশ্চিন্তা ও হতাশা সৃষ্টি করে। তাই, আমাদের উচিত ঋণ নিতে আগে ভালভাবে চিন্তা করা এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝে ঋণ নেওয়া। অযথা ঋণ নেওয়া আমাদের জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করে।
যখন আমরা ঋণের ভারে জর্জরিত হই, তখন আমাদের আত্মমর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য ঋণের বোঝা কমানোর চেষ্টা করা উচিত এবং সঠিকভাবে ঋণ পরিশোধের প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
দোয়ার মাধ্যমে আশা ফিরে পাওয়া
ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন। যে কোনো সমস্যায়, বিশেষ করে আর্থিক সমস্যা হলে, আমরা যেন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবীজি যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, তখন এই দোয়া করতেন।
শেষ কথা
ঋণ আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে তা আমাদের জীবনকে জটিল করে দিতে পারে। তাই, আমাদের উচিত সঠিকভাবে ঋণ নেওয়া এবং পরিশোধ করা। আল্লাহর কাছে দোয়া করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন এবং আমাদের ঋণ পরিশোধের তাওফিক দিন।