বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি হল গুগল, যা ইউটিউবের মালিক। সম্প্রতি গুগলকে একটি অবিশ্বাস্যভাবে বড় জরিমানা দেওয়া হয়েছে রাশিয়াতে। এই জরিমানার পরিমাণ এতটাই বেশি যে তা বিশ্বের মোট জিডিপির চেয়েও অনেক বেশি। আপনি কি জানেন, এই জরিমানা ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৬টি শূন্যের পরিমাণ হয়েছে, যা “অ্যান্ডেসিলিয়ন” নামে পরিচিত। এক কথায়, এটি একটি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়নের সমান!
চলুন, আমরা বিস্তারিত জানি কীভাবে এই বিশাল জরিমানা গঠিত হচ্ছে এবং কেন গুগলকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হবে।
জরিমানার পরিমাণ: কীভাবে এত বড় হলো?
রাশিয়ার আদালত, গুগলকে ইউটিউবের মাধ্যমে কিছু রুশ টিভি চ্যানেলের অ্যাকাউন্ট ব্লক করার জন্য এক বিশাল জরিমানা ধার্য করেছে। এই জরিমানার পরিমাণ এতটাই বড় যে তা বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের (জিডিপি) চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়ে গেছে। গুগলের বর্তমান স্টক মার্কেট মূল্য প্রায় ২.১৬ ট্রিলিয়ন ডলার, কিন্তু জরিমানা এত বেশি যে তাদের জন্য এটি পরিশোধ করা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই জরিমানা পরিমাণ বাড়তে থাকছে কারণ গুগল এখনো রাশিয়ার ১৭টি টিভি চ্যানেলের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট ফেরত দেয়নি। রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা “তাস” জানিয়েছে, যদি গুগল ৯ মাসের মধ্যে এই জরিমানা পরিশোধ না করে, তবে প্রতিদিন জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
রাশিয়ায় ইউটিউব অ্যাকাউন্ট ব্লক করা: কেন এই সমস্যা শুরু হয়েছিল?
এই জরিমানা এবং মামলা মূলত ২০২০ সালে শুরু হয়। গুগল প্রথমে রাশিয়ার কিছু টিভি চ্যানেল যেমন “Tsargrad TV” এবং “RIA FAN” এর ইউটিউব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাঙ্কশন আইন মেনে করা হয়েছিল, কিন্তু রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপটি মোটেও ভালোভাবে নেননি।
যখন ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ইউটিউব আরও কিছু রুশ টিভি চ্যানেল যেমন “Sputnik” এবং “RT”-এর অ্যাকাউন্টও ব্লক করে দেয়। এই পদক্ষেপ রাশিয়ার সরকারের ক্রোধ আরও বাড়িয়ে তোলে। এরপর রাশিয়া গুগল ও ইউটিউবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে।
জরিমানার বৃদ্ধি এবং আদালতের ভূমিকা
রাশিয়ার আদালত বলেছে যে, গুগল যদি তাদের দেওয়া আদেশ মেনে ইউটিউব অ্যাকাউন্টগুলি ফিরিয়ে না দেয়, তবে জরিমানা আরও বাড়ানো হবে। ২৮ অক্টোবরের শুনানিতে বিচারক জানিয়েছিলেন যে তিনি এমন একটি মামলার ব্যাপারে চিন্তা করছেন যেখানে অনেক শূন্য রয়েছে। অর্থাৎ, এই জরিমানার পরিমাণ যে ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তা আরেকটু পরিষ্কার হয়।
গুগলকে এই জরিমানা শোধ করতে বলা হলেও, রাশিয়ার বাজারে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের অবশ্যই আদালতের আদেশ মানতে হবে।
গুগল ও ইউটিউবের পরবর্তী পদক্ষেপ
গুগল জানায় যে তারা আদালতের আদেশ মেনে চলতে চেষ্টা করবে, তবে ইউটিউবের নীতিমালা অনুযায়ী, তারা কিছু চ্যানেল নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতেই পারে। ইউটিউবের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, রাশিয়ার আইন মেনে চলা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যখন বিষয়টি স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাথে জড়িত থাকে।
এখনও পর্যন্ত, গুগল ইউটিউব চ্যানেলগুলো ফিরিয়ে দেয়নি, তবে তারা চেষ্টা করছে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধান করার। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে যে, তারা যদি গুগলকে জরিমানা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে পারে, তবে ইউটিউব পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
গুগল এবং ইউটিউবের ভবিষ্যৎ
বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানি গুগল এখন এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। ইউটিউব রাশিয়াতে বন্ধ করে দেওয়ার কারণে গুগলকে যে বিশাল পরিমাণ জরিমানা দিতে হচ্ছে, তা প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি নজির হয়ে থাকবে। যদিও গুগলের কাছে প্রচুর সম্পদ রয়েছে, তবে এই ধরনের জরিমানা থেকে তারা কিছুই শিখবে না, এমনটি মনে করা যায় না।
গুগল এবং ইউটিউবের জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে যদি অন্য দেশগুলোও একইভাবে তাদের প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে। তবে, গুগল কি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার বাজারে ফিরে যাবে, নাকি তারা এই জরিমানা পরিশোধ করবে—এটি এখন দেখার বিষয়।
গুগল এবং ইউটিউবের রাশিয়ায় বিপুল জরিমানা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে। যদিও গুগলের বর্তমান বাজার মূল্য অনেক বেশি, তবে এই জরিমানা তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে যে সব দেশ তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করে, রাশিয়া তাদের মধ্যে একটি নয়। এটি ভবিষ্যতে গুগল এবং ইউটিউবের মতো প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম