বাংলাদেশের সরকারের একটি নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে। চলুন, এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ও এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত জানি।

বৈঠকের তথ্য

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ সব সরকারি চাকরিতে এই বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে। শুধু তাই নয়, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতেও এই নিয়ম কার্যকর হবে। তবে প্রতিরক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে।

বয়স বাড়ানোর কারণ

১. করোনার প্রভাব: করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সরকারি চাকরির নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন।

২. আর্থিক সমস্যা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি সংকটে ছিল, ফলে চাকরির সুযোগও কম ছিল।

৩. শিক্ষাগত দেরি: পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে রাজনৈতিক কারণে অনেক ছাত্র ঠিক সময়ে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি, ফলে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

কমিটির সুপারিশ

এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তারা প্রস্তাব দেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর করা হোক। তবে সরকার চূড়ান্তভাবে ৩২ বছর বয়স নির্ধারণ করেছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। একদল লোক বলছেন, বয়স বাড়ানোর ফলে অনেকের চাকরি পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। তবে অন্যদিকে কিছু লোক বলছেন, বড় বয়সে চাকরি পেয়ে তরুণদের জন্য নতুন কিছু দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে।

সরকারি চাকরির জন্য বয়সের পরিবর্তন

সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে সরকারি চাকরির বয়সসীমা পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯১ সালে বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী এবং আদিবাসীদের জন্য বয়সসীমা বাড়ানো হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য বয়সসীমা ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য তা ৩২ বছর। এদিকে, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ও ডাক্তারদের জন্য আবেদন করার বয়সসীমা ৩২ বছর।

চাকরির বাজারের প্রভাব

বয়সসীমা বাড়ানোর ফলে চাকরির বাজারে প্রভাব পড়বে। যারা নতুন চাকরির জন্য আবেদন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি সুযোগ। তবে বয়সে বড় হলে অনেকের জন্য নতুন কাজ শেখা এবং কার্যকরী হওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে।

সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ

নতুন বয়সসীমা দেশের যুবকদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করবে। তবে রাজনৈতিক কারণে যারা বিগত দিনে চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের জন্য এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের যুবসমাজের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি অনেকেই উদ্বিগ্ন যে, বয়স বাড়ানোর ফলে কীভাবে তারা নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন। সব মিলিয়ে, এই সিদ্ধান্ত দেশের চাকরির বাজারে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।