ঢাকায় চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত আনসার বাহিনীর সদস্যদের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঘটেছে। গতকাল রাত ৯টার দিকে সচিবালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর।
আনসার বাহিনীর আন্দোলন ও সংঘর্ষের বিস্তারিত
সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০২৪: ঢাকা শহরজুড়ে কয়েকদিন ধরে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। তারা সচিবালয় ঘেরাও করে রাখে এবং সরকারকে তাদের দাবি পূরণের আহ্বান জানায়। গতকাল, রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন রাত পর্যন্ত চলতে থাকে। তাদের আন্দোলনের কারণে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়ে যান এবং রাজধানীতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
আনসার বাহিনীর সদস্যরা প্রাথমিকভাবে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা চান। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানাতে সচিবালয়ে অবস্থান নেন। রাত ৯টার দিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা আটকা পড়েন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে সচিবালয় এলাকায় মিছিল করে এবং সেখানে আনসার বাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
সংঘর্ষের সময় আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়। এতে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর। প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদারও আহত হন।
আনসার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার ও মামলা
সংঘর্ষের পর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনে অংশ নেওয়া আনসার সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে। আজ বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত ১৪৯ জন আনসার সদস্যকে আদালতে নেওয়া হয়। তাদের ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে এবং বিকেলে তাদের আদালতে তোলা হবে।
পল্টন থানায় ১১৪ জন আনসার সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিন থেকে চার হাজার আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় সরকারি কাজে বাধা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। শাহবাগ ও রমনা থানায়ও মামলা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
সরকারি পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে আনসার সদস্যদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে হবে এবং কত টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে তা বিশ্লেষণ করতে হবে। সরকারের এসব যুক্তি মেনে না নিয়ে, আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও করে রাখেন।
এদিকে, সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচিবালয় এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে। সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের ফলে, আনসার বাহিনীর সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করা হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
অভিযোগ ও দাবি
আনসার বাহিনীর সদস্যদের দাবির মধ্যে চাকরি জাতীয়করণ ছিল অন্যতম। তাদের দাবি অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি এবং তাদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার থেকে কিছু আশ্বাস পাওয়া গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এ কারণে, আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের দাবি করেছেন।