চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে বৃহৎ সমাবেশ; ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার, বেলা ১১টায় রাজধানী ঢাকার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে চাকরি প্রত্যাশীদের এক বিশাল মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে একযোগে আওয়াজ তোলা। এই সমাবেশে সারা দেশ থেকে আসা চাকরি প্রত্যাশীরা অংশগ্রহণ করেছেন এবং তারা নিজেদের দাবির প্রতি দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করেছেন।
নাগরিক ঐক্যের সমর্থন ও বক্তব্য
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এত সব অস্বাভাবিক নিয়ম ও অনিয়ম বিদ্যমান রয়েছে যে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে গেলে একটি ডিকশনারি হয়ে যাবে। অস্থায়ী নিয়োগ এবং সেসমস্ত নিয়মের অবসান এখন অত্যন্ত জরুরি। এগুলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও সুযোগ নেই।” তিনি এই আন্দোলনকে কেবল সরকার পতনের আন্দোলন হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে, দেশ ও শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
আন্দোলনকারীরা জানান, বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর। কিছু দেশে তা উন্মুক্তও রয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ বছর করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা এখনও ৩০ বছর রয়েছে। নতুন বাংলাদেশের মধ্যে এই বৈষম্য তারা আর মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশের স্লোগান ও কার্যক্রম
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা নানা স্লোগান তুলেছেন, যেমন “বয়স না মেধা-মেধা মেধা”, “আর নয় কালক্ষেপণ-এবার দাও প্রজ্ঞাপন”, “৩৫ এর শৃঙ্খল-ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও” ইত্যাদি। তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে যাত্রী চলাচল বন্ধ করে দেন এবং এই অবরোধের ফলে এলাকার সমস্ত সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যান্য বক্তব্য এবং পরিস্থিতি
এদিকে, আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন যে, ১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে ৩০ বছর করা হয়, তখন বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছরে পৌঁছেছে। অতএব, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত প্রকট। ২০১১ সালে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কেন বৃদ্ধি করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন শাকিল জানান, “আন্দোলনকারীরা শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এবং পরে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এর ফলে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে।”
সাংবাদিক সম্মেলন ও ভবিষ্যত কর্মসূচি
৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মহাসমাবেশের আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা উল্লেখ করেন, তারা সরকারের কাছ থেকে দ্রুত একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত অথবা প্রজ্ঞাপনের আশ্বাস আশা করছেন।